আফগানিস্তানে জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) এক ডিক্রি জারি করে তালিবান বলেছে, নারীদের ‘সম্পত্তি’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয় এবং বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সম্মতি নিতে হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময় পরে বিধবাদের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করারও অনুমতি দিয়েছে আফগান প্রশাসন।
আফগানিস্তানের তালিবান সরকার শুক্রবার নারী অধিকারের বিষয়ে একটি আদেশ জারি করে বলেছে, নারীদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া যাবে না বা শান্তি অথবা বিবাদের মীমাংসা হিসেবে তাদের দান করে দেওয়া যাবে না।
ধর্মীয় নির্দেশটি এমন সময়ে দেয়া হয়েছে যখন কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি আগস্টে সংঘাত-বিধ্বস্ত দেশটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হয়।
তালিবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা ডিক্রি ঘোষণায় বলেছেন, নারী-পুরুষ উভয়ে সমান হওয়া উচিত। আফগানিস্তানে কেউ নারীদের জোর খাটিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে বিয়ে করতে পারবে না।
ডিক্রিতে অবশ্য নারীদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সসীমা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এর আগে সেটি ১৬ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। ডিক্রিতে তালিবান আরও জানিয়েছে, এখন থেকে বিধবা আফগানরা স্বামীর মৃত্যুর ১৭ সপ্তাহ পর নিজের পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে পারবেন।
তালিবান নেতৃত্ব ঘোষণা দিয়েছে, তারা আফগান আদালতকে নারীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষ করে বিধবাদের সঙ্গে। এদিকে তালিবানের এমন ঘোষণায় দেশটির নারী অধিকার কর্মী ও সংগঠনগুলো সন্তুষ্ট।
আফগানিস্তানে বিগত দুই দশকের আন্তর্জাতিক উপস্থিতিতে নারীদের অধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, কিন্তু তালিবানদের প্রত্যাবর্তনের ফলে সেটা হুমকির মুখে দেখা যাচ্ছে। তালিবানরা ১৯৯০-এর দশকে তাদের পূর্বের শাসনামলে কার্যত নারীদের আবদ্ধ করে দিয়েছিল। তাদের জনজীবন এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল।
দরিদ্র, রক্ষণশীল দেশে জোরপূর্বক বিবাহ আরো সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতরা তাদের অল্প বয়স্ক কন্যাদের বিয়ে দেয় একটি পাত্র-মূল্যের বিনিময়ে যা ঋণ পরিশোধ করতে এবং তাদের পরিবারের খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিক্রিতে বিয়ের জন্য ন্যূনতম বয়স উল্লেখ করা হয়নি, যা আগে ১৬ বছর বয়সে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দশকের পর দশক ধরে আফগানিস্তানে নারীদেরকে অর্থের বিনিময়ের টোকেন হিসেবে বা বিরোধ বা উপজাতীয় বিবাদের অবসান ঘটানোর সম্পত্তির মতো বিবেচনা করা হতো। তালিবান এখন বলেছে যে, তারা এ ধরনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। তারা আরো বলেছে যে, একজন বিধবাকে এখন তার স্বামীর মৃত্যুর ১৭ সপ্তাহ পরে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হবে। স্বাধীনভাবে সে তার নতুন স্বামী বেছে নিতে পারবে।
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিনের উপজাতীয় প্রথা অনুসারে, বিধবাকে তার প্রয়াত স্বামীর ভাই অথবা অন্য কোনো আত্মীয়কে বিয়ে করা বাধ্যতামূলক ছিল। তালিবান নেতৃত্ব ঘোষণা দিয়েছে, তারা আফগান আদালতকে নারীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষ করে বিধবাদের সঙ্গে। গত আগস্টে ক্ষমতায় আসা গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, তারা জনগণের মধ্যে নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছে।
তালিবানের এ ধরনের ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই সন্তুষ্ট নারী অধিকার কর্মী ও সংগঠনগুলো। শুক্রবার কাবুলে এক কনফারেন্সে আফগান নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবা সিরাজ বলেন, এটি বিশাল ব্যাপার। যদি এটি হয়, যেমনটি হওয়ার কথা ছিল, তবে এই প্রথমবার তারা (তালিবান) এমন ডিক্রি জারি করলো এবং এটি আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, তালিবানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটির অর্থনীতি, কূটনীতি, শাসনপদ্ধতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ দেখা দেয় আফগান নারীদের নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দেশ ও সংস্থা নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আর সেসব উদ্বেগ যে অমূলক নয়, তার প্রমাণও মিলতে শুরু করেছে। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকারের বেঁধে দেওয়া নানা নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়ছেন আফগান নারীরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ