
ইতিহাসে জাহাজডুবির অনেক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। তবে এসেক্স জাহাজডুবি অন্যগুলো থেকে আলাদা, ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় এই জাহাজডুবি। টাইটানিক বিপর্যয়ের প্রায় ১০০ বছর আগে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে রহস্যজনকভাবে ডুবে গিয়েছিল ‘এসেক্স’ নামের একটি জাহাজ। তিমি শিকারিদের জগতে ‘লাকি’ বলে সুনাম ছিল জাহাজটির।
দক্ষিণ আমেরিকার তিমি অধ্যুষিত সমুদ্রে গিয়ে তিমি শিকার ও তিমির তেল সংগ্রহই ছিল এ জাহাজ দলের উদ্দেশ্য। ১৮১৯ সালের ১২ আগস্ট এসেক্স শেষ যাত্রা শুরু করে। ১৮২০-এর জানুয়ারিতে এসেক্স কেপ হর্নে পৌঁছে। সেখান থেকে তিমি শিকার করতে মাঝ সমুদ্র যাত্রা করে এসেক্স। সেদিন জাহাজটির মধ্যে অশুভ চিহ্ন দেখাতে পায় কেউ কেউ। যা আজও রহস্যাবৃত।
কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে শুরু হয় তিমি শিকার। এমন অবস্থায় এক বিশাল তিমি আক্রমণ করে এসেক্সকে। জানা যায়, ওই তিমিটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮৫ ফুট। সেই দানব আকৃতির তিমিটির রং ছিল সাদা। যা নাকি নিথর হয়ে পানিতে ভাসছিল। হঠাৎ সেটা জাহাজের দিকে ধেয়ে এসে আক্রমণ করে।
এই ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি পোড় খাওয়া তিমি শিকারিরাও। সেই বিশাল তিমির ধাক্কায় টুকরো টুকরো হয়ে যায় এসেক্স। জাহাজের ২০ নাবিক হোয়েলিং বোটে ভাসতে শুরু করে। জাহাজের ২০ নাবিকই ওই মুহূর্তে বেঁচে যায়। কিন্তু বেঁচে গেলে কি হবে? চরম খাদ্যাভাব, প্রবল সামুদ্রিক বিপদ এবং অসংখ্য তিমির হামলায় অতিষ্ট হয়ে ওঠে তারা।
রসদপত্র কম থাকায় তিনজন ক্রু একটি ফাঁকা দ্বীপে নেমে যায়, অনেকটা রবিনসন ক্রুসোর মতো বেঁচে থাকার আশায়। এমনকি তারা আদৌ পরে উদ্ধার হয়েছিল কি না তা জানা যায়নি।
কারো পেটে ছিল না খাবার। ক্ষুধার তাড়নায় মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছিল সবাই। খাবার আর জলের অভাবে বাকি ১৭ জনের একজন কাহিল হয়ে পড়ে। বাকিরা আর কি করবে? বাধ্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের প্রাক্তন সহকর্মীর উপরেই। তার বিভিন্ন অঙ্গ ছিঁড়ে-কেটে খায় সহকর্মীরাই। এভাবে একেকজন করে কমতে থাকে।
এভাবে চরম খাদ্যাভাব, প্রবল সামুদ্রিক বিপদ এবং অসংখ্য তিমির হামলা এড়িয়ে কোনও মতে ‘ইন্ডিয়ান’ নামের এক জাহাজের নজর কাড়তে সমর্থ হন। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন নাবিক টিকে ছিল।
শেষ যাত্রায় জাহাজটির ক্যাপ্টেন ছিলেন জর্জ পোলার্ড। তার সুনাম ছিল অনেক। তিনি আবার এক নামজাদা নাবিক বংশের সন্তান। আর ফার্স্ট মেট ছিলেন আওয়েন চেজ। তার ইমেজ ছিল প্রায় সুপারম্যানের সমতুল্য। পুরো ঘটনার সাক্ষী ছিল ১৪ বছরের এক কেবিন বয়। তার নাম টমাস নিকারসন।
ফার্স্ট মেট চেজের নৌকায় ছিলেন নিকারসনসহ আরও কয়েকজন। ক্যাপ্টেন পোলার্ড ছিলেন অন্য নৌকায়। তিনিও বেঁচে ফেরেন। এসেক্সের বেঁচে ফেরা নাবিকদের অনেকেই পরে অন্য তিমি শিকার অভিযানে শামিল হলেও ক্যাপ্টেন পোলার্ড আর কখনও কাজ করেননি।
জাহাজটি কেন ডুবেছিল তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছিল ১৮২০-এর দশকে। এরপর এক সময় বিভৎস এই ঘটনা লোকমুখে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যায়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ