রাশিয়ায় করোনা তাণ্ডব চালাচ্ছে। আক্রান্ত যেমন হোক মৃত্যুতে রাশিয়া বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাশিয়ায় গত অক্টোবর মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনা মহামারি শুরুর পর দেশটিতে এক মাসে এটিই সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা রোস্তাত এ তথ্য জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে অক্টোবর মাসের প্রাণহানির তথ্য প্রকাশ করেছে রোস্তাত। এ ছাড়া রাশিয়ায় প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছেন, সে সংখ্যাও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
রোস্তাতের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এ সংখ্যা রাশিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া সংখ্যার তুলনায় বেশি। সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুসারে, মৃত মানুষের এ সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চম। তবে মৃত্যু ৫ লাখ ২০ হাজার হলে মৃত্যুর দিক তৃতীয় অবস্থানে চলে যাবে দেশটি।
রাশিয়ায় তদন্তের পর যে মৃত্যুগুলোর প্রাথমিক কারণ ‘করোনার সংক্রমণ’ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, শুধু সেগুলোই সরকারি তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। তবে রোস্তাত আরও বিস্তৃত পরিসরে তালিকাটি করেছে। এখানে ভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরবর্তী জটিলতার কারণে মৃত্যুগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনার দৈনিক সংক্রমণের হিসেবে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে ফের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এ রোগে শুক্রবার সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায়। এছাড়া, শুক্রবার বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৮১ হাজার ২৩৬ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২৭১ জনের।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠাদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্স থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার দৈনিক সংক্রমণে বিশ্বে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৬২ জন এবং করোনায় এই দিন দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৯৫ জনের।
একই দিন এ রোগে রাশিয়ায় মারা গেছেন ১ হাজার ২৩৫ জন করোনা রোগী, যা ছিল দৈনিক হিসেবে করোনায় কোনো একক দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যু।পাশাপাশি, শুক্রবার দেশটিতে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৯৩০জন।
মহামারির প্রভাবকে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তেমন গুরুত্ব দেয় না বলে অভিযোগ আছে। রাশিয়ার পরিসংখ্যান সংস্থা রোস্তাতের হিসাব আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে। সংস্থাটির দেওয়া সম্ভাব্য হিসাবে গত আগস্টের মধ্যেই রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চার লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে।
২০২০ সালের আগস্টে রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক-ভি টিকা নিবন্ধন পায়। পরে বেশ কয়েকটি দেশে এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২০ সালে কঠোর লকডাউন শেষ হওয়ার পর মস্কো কর্তৃপক্ষ নতুন বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিল। ধুঁকে ধুঁকে চলা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য বিধিনিষেধের পরিবর্তে টিকাদানের প্রতি জোর দিয়েছে তারা। তবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ রুশ কর্তৃপক্ষের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও মাত্র ৪০ শতাংশ নাগরিক টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ায় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এক সপ্তাহের জন্য দেশজুড়ে ছুটি ঘোষণা করেছেন পুতিন। বেতনসহ এ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া মস্কোতে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সেবাগুলো ১১ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ায় জনগণের পূর্ণ ডোজ কভিড টিকা নেওয়ার হার কম। ২৩ অক্টোবর নাগাদ দেশটিতে টিকা নেওয়া মানুষের হার ছিল ৩২.৮%। অথচ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই মানুষের টিকা নেওয়ার হার এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। তবে রাশিয়া সবার আগেই কোভিড টিকা স্পুতনিক-ভি উদ্ভাবন এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও রুশদের অনেকেই এ টিকা নিয়ে সন্দিহান। তাই জনগণের টিকা নেওয়ার আগ্রহও কম। কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাশিয়ায় কোভিড সংক্রমণ বেড়ে চলছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৩
আপনার মতামত জানানঃ