সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৫২৫ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। যার মধ্যে ৯৯ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন ৯৯ জন। তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৮টি ইউপিতে নির্বাচনের কথা থাকলেও নির্বাচন হয়েছে হাজারটিতে। যার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৪৬ জন।
এক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পাওয়া ৯৯ টি ইউপি বাদ দিলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতেছেন ৪২৬ টি। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছে ৪৪৬ টি। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে সোমবার রাতে জানিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তবে স্পষ্টভাবেই এগিয়ে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
নৌকার ভরাডুবি
বেসরকারি ফলের ভিত্তিতে এ তথ্য জানায় নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিবালয় জানায়, নির্বাচনে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৬ ভোটারের মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৩১৮টি ভোট পড়েছে। এবার ভোটার উপস্থিতির হার ৭৪ দশমিক ২১ শতাংশ।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে ১৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ১ জন, সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ১ হাজার ৮টি ইউনিয়নে ভোটের কথা থাকলেও ভোট হয়েছে ১ হাজার ইউনিয়নে। ৮টিতে ভোট হয়নি। যার মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে সহিংসতার কারণে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। জানা যায়, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও পরের দিনের সহিংসতায় দেশে ১০ প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
রোববারের ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সবচেয়ে বেশি ধরাশায়ী করেছেন খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আওয়ামী লীগ নেতারা। সেখানে আওয়ামী লীগের যতজন জিতেছেন, তার প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে জয় পেয়েছেন মনোনয়ন না পাওয়া বিদ্রোহী নেতারা।
আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকা ঢাকা ও রংপুর বিভাগেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদ্রোহী নেতা হারিয়ে দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীদের। এর আগের দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নৌকা ডুবিয়েছেন কয়েকশ’ আওয়ামী লীগ নেতা।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ, ভবিষ্যতে আর কখনও মনোনয়ন না দেয়ার সতর্কতার পরেও বিদ্রোহী নেতারা সেসব গা করেননি। বরং প্রায় ৩০০ এলাকায় তাদের জয় এটা নির্দেশ করছে যে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন আসলে ভুল মানুষের হাতে উঠেছে।
জামানত হারালেন আ’লীগ প্রার্থী
নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার পূর্বধলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর দাপটে জামানত খোয়ালেন নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদির।
ইউনিয়ন নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত ভোট না পাওয়ায় নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন তিনি। তবে তখন জামানত হারাতে হয়নি।
গত রোববার জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার ২৫ ইউনিয়নে ভোট হয়। এতে পূর্বধলা উপজেলায় ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। দুটি গেছে নৌকার পক্ষে।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সই করা বেসরকারি ফলে পূর্বধলা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদির পেয়েছেন মাত্র ৩৫১ ভোট।
যার বিপরীতে মোটরসাইকেল প্রতীকের সিদ্দিকুর রহমান বুলবুল ৬ হাজার ৩৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অটোরিকশা প্রতীকের আশরাফুল করিম ৫ হাজার ৬৩২ ভোট এবং চশমা প্রতীকের আফতাব উদ্দিন পেয়েছেন ৩ হাজার ১৪৭ ভোট। মোট ভোট পড়েছে ১৭ হাজার ১২১।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৪৪ এর ৩ অনুযায়ী নির্বাচনে ভোটারদের দেয়া মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই টাকা জমা দেয়া হয় সরকারের কোষাগারে। এ ক্ষেত্রে পূর্বধলা ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাদিরের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২০০
আপনার মতামত জানানঃ