
Photo : Fars News Agency
আজিম রহমান, যুক্তরাষ্ট্র : সরকারীভাবে না বললেও এটা নিশ্চিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ স্থানীয় এজেন্টের সহযোগীতায় হত্যা করেছে ইরানের পরমানু বিজ্ঞানী ফখরিজাদেহকে। হঠাৎ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার পেছনে সম্ভাব্য দুটো কারণ থাকতে পারে; এক, ইরানকে তার পারমানবিক সমরাস্ত্র তৈরী হতে দূরে রাখা। দুই; ইনকামিং মার্কিন প্রশাসনের সাথে ইরানের সম্পর্ক যাতে স্বাভাবিক না হয় তা নিশ্চিত করা।
সব বিচারে উপরের দুটো কারণের দ্বিতীয়টাকেই আমি এগিয়ে রাখবো। কারণ হত্যার টাইমিং। এবং এই হত্যার পেছনে কেবল ইসরায়েল জড়িত তা মনে করার কোন কারণ দেখছিনা। তাতে বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসনেরও হাত থাকার কারণ রয়েছে।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওভাল অফিসে বসায় পৃথিবীর যে কটা রাস্ট্র লাভবান হয়েছিল ইসরায়েল তার অন্যতম। ওবামা প্রশাসনের সাথে আমেরিকার পার্টনার ইন ক্রাইম ইসরায়েলের সম্পর্ক শেষদিকে শীতল হতে শীতলতর হচ্ছিল। বিদায় প্রাক্কালে ইসরায়েল ওবামা প্রশাসনকে উপেক্ষা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করেছিল। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, হোয়াইট হাউসকে পাশ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতনিয়াহুর মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের ভাষণ।
অতীতে কোন মার্কিন প্রশাসনই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকার করে ওখানে মার্কিন দূতাবাস স্থনান্তরে রাজী হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতার প্রথম প্রহরে কাজটা করে ইসরায়েলের এই বিতর্কিত মিশনকে বৈধতা দিয়েছে।
প্যালেস্টাইনি কনফ্লিক্টের সমাধান হিসাবে অতীতের দুই রাস্ট্রের সমাধান হতে ট্রাম্প প্রশাসন সরে এসেছে। মুখে না বললেও কাজ-কর্মে ইসরায়েলিদের তাই বুঝিয়েছে। ইসরায়েল তা হাতে চাঁদ পাওয়ার মত লুফে নিয়েছিল।
বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও প্যালেষ্টাইনের অভ্যন্তরে ইসরায়েলী স্যাটেলারদের একটা ক্যাম্প ঘুরে এসেছেন। মার্কিন কোন প্রশাসনই অতীতে ইসরায়েলের এসব দখল সমর্থন করেনি, বরং মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করে ইসরায়েলকে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। পম্পেও’র সফর ছিল নজিরবিহীন এবং ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তবে অনেকে বলছেন পম্পেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে রিপাব্লিকান দলের মনোনয়ন পাওয়ার কৌশল হিসাবে নিজেই কাজটা করেছেন। এবং এর প্রতি নীরব সমর্থন ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার জামাতা জেরেড কুশনারের। তবে তা করার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিশ্চয় ধারণা করতে পারেননি এবারের নির্বাচনে তিনি হারতে যাচ্ছেন।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের বিজয়ে ইসরায়েল উল্লাসিত হয়েছিল ইরান-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষৎ ভেবে। তাদের প্ররোচনায়ই ট্রাম্প ইরানের সাথে স্বাক্ষরিত পারমানবিক চুক্তি হতে সরে এসেছিল। সন্দেহ নেই মার্কিন সিদ্ধান্তে প্রভাবিত করেছিল ঐ অঞ্চলের সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ আরও কয়েকটি দেশ।
জো বাইডেনের বিজয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি ইসরায়েলের জন্যে ছিল বিরাট এক সেটব্যাক। বাইডেন-হ্যারিস টিকেট নির্বাচনে জিতলে ইরানের সাথে নতুন করে পারমানবিক চুক্তি করবে, ইসরায়েলিদের এমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণ ছিল।
মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানে বাইডেন প্রশাসনের মিশনকে জটিল করার জন্যেই হয়ত ফখরিজাদেহকে হত্যা করেছে ইসরায়েলিরা। ইরানের সামনে এ মহূর্তে প্রতিশোধ নেয়া ছাড়া অন্য কোন রাস্তা নেই। সন্দেহ নেই যে কোন প্রতিশোধের প্রথম শিকার হবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এখানেই সফল হবে ইসরায়েল-ট্রাম্প প্রশাসনের ফখরিজাদেহ কিলিং মিশন। ইরানিদের হাতে মার্কিন জানমালের ক্ষতি হলে দেশটার জনগণ কোনভাবেই মেনে নেবেনা নতুন শান্তি চুক্তি। রক্তের বদলে রক্ত, এমনটাই হবে জনগনের দাবি। আর এখানেই শেষ হাসি হাসবে ইসরায়েল ও তার দোসর সৌদি আরব সহ ঐ অঞ্চলের রাজা-বাদশার দল!
20 - 20Shares
আপনার মতামত জানানঃ