চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বন্দীকে মারধরের অভিযোগে কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) শফিকুল ইসলাম খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে আবেদনটি করেন হত্যা মামলায় দণ্ডিত বন্দী মো. শামীমের স্ত্রী পারভীন আক্তার। এ ব্যাপারে আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদী পারভিন আক্তারের স্বামী মো. শামীম দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আছেন। একটি হত্যা মামলায় ২০০৭ সালের শামীমকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০১২ সালে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারদণ্ড দেন আদালত।
মামলায় আসামি করা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার মো. সাইমুর, কারারক্ষী আইজি প্রিজন গোয়েন্দা সবুজ দাশ ও সুবেদার মো. এমদাদ হোসেনকে।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা কারা অভ্যন্তরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে বাদীর স্বামী শামীমকে শারীরিকভাবে নাজেহাল ও মারধর করেন। খাবার না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় জেলার তারিকুল ইসলাম বন্দী শামীমকে বেধড়ক মারধর করেন।
১৭ জুলাই সন্ধ্যায় এমদাদ, সবুজ ও সাইমুর গিয়ে তাকে কারা অভ্যন্তরে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। পরে তাকে জেলারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন জেলার তারিকুল বলেন, ‘শালা এখনো মরেনি, মরলে এক কলম লিখে দেব, কিছুই হবে না।’ এ কথা বলে জেলারও আবার শামীমকে মারধর করেন।
নালিশি মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১১ নভেম্বর একটি মামলায় শামীমকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। তখন বাদী দেখা করতে গেলে এসব নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তার স্বামী। বর্তমানে শামীম ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারে না। শামীমের শরীরে এখনও আঘাতের চিহ্ন আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কারাগারে আটক মো. শামীমকে নির্যাতন করা হয়নি। মিথ্যা অজুহাতে এ মামলা করা হয়েছে। সে কারাগারে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাকে কুমিল্লা কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে পুনরায় চট্টগ্রাম কারাগারে আসার নানা চেষ্টা করে। তার অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ আসার সাই না দেওয়ায় শামীম চট্টগ্রাম কারাগারে আসতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাসহ ৮টি মামলা রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘কারাগারগুলোতে নির্যাতন একটি প্র্যাকটিসে (অভ্যাস) পরিণত হয়েছে। এখন থেকেই যদি এগুলো শক্ত হাতে মোকাবিলা করা না যায়, তাহলে এসব বন্ধ করা খুব কঠিন হবে।
তারা বলেন, ‘অপরাধীরা অপরাধ করবেই। কিন্তু আইনের লোক তো অপরাধীর মতো আচরণ করতে পারে না। তাদের চাকরিতে প্রবেশের আগে যে প্রশিক্ষণ তা আরও যুগোপযোগী, মানবতা উপযোগী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ উপযোগী হওয়া উচিত।’
তারা বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে কারগারগুলো প্রযুক্তিনির্ভর নয়। এর কারণ হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের ধারণা যে, মারধর-নির্যাতন না করলে কেউ তথ্য দেয় না, দোষ স্বীকার করে না। ক্ষমতা জাহির করার জন্য, এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এই চর্চা ও মানসিকতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত রেশ মেটানোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দেশের আইন। আইনের সাথে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা এর অপব্যবহারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের রেওয়াজ প্রচলিত। কারাগারে বন্দীকে কেন নির্যাতন করা হয়েছে এবিষয়ে আসামিদের তদন্ত করলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। কদিন আগে বন্দীকে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। এখন অমানবিকভাবে বন্দীকে নির্যাতনের অভিযোগ এলো। এ থেকে দেশের কারাগারগুলোর এক ভয়ানকতম চিত্র উঠে আসে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসামিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ