আমান অভিষেক : অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় ফেসবুক আগ্রাসীভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ার বাজার দখলে ব্যস্ত কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন রোধ করতে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো মজবুত করার জন্য কোন আয়োজন নেই। আসুন একটু কল্পনা করে দেখি এমন যদি হয়, ইংরেজি ভাষাভাষী নয় এমন একটি দেশের সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি আগ্রাসীভাবে চেষ্টা তদবির করে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার বাজার প্রচার প্রসার করতে, তাহলে কেমন হবে বিষয়টা।
ধরে নিই, ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ফেসবুক’ বিশ্বের শুধু যে তথ্যের প্রাথমিক উৎসে পরিণত হচ্ছে তাই নয় বরং নিজেই ইন্টারনেটের সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমেই এখন আপনি কোন ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ বা অন্যকোন ধর্মের প্রতি বিষের বাষ্প ছড়ানো, ধর্মের ও জাতীয়তাবাদের প্রচার প্রসার করতে পারবেন, লাইভ হিংস্র খুনোখুনি বা দল বেঁধে মানুষকে পিটানো বা পোড়ানোর ভিডিও দেখতে পারবেন। এমনকি মারাত্মক অস্ত্র হাতে ফেসবুকের লাইভে এসে হুমকি দেয়া খুব নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু ঘৃণা ও হিংসাত্মক কথা, হুমকি বন্ধের জন্য রিপোর্টিং প্রক্রিয়াটা এখনো ধোঁয়াশার বৃত্তে আবর্তিত। ক্ষেত্রবিশেষে পুরোপুরি অকার্যকর কারণ বিভিন্ন ভাষায় লিখিত ফেসবুক পোস্ট বোঝার মত যথেষ্ট জনবল ফেসবুক নিয়োগ দেয়নি। ফেসবুক রিপোর্টিংয়ের আবেদন রিভিউ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় বিগডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। বাইনারি ডাটা বাংলায় বা অন্য যেকোন ভাষায় লিখিত পোস্টকে যান্ত্রিক অনুবাদ করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে, ফলে ভাষাগত জটিলতায় কোনটা ঘৃণার বিষ আর কোনটা শান্তির সুবাতাস ফেসবুকের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
ফেসবুক নামের সোশ্যাল মিডিয়াটি এখন খুব সন্তর্পনে এবং কৌশলে মানুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ, বাস্তুভিটায় আগুন জ্বালানো, গণহত্যায় ইন্ধন ও অলক্ষ্যে সাহায্য করে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ সাধের বাড়িঘর ফেলে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত জীবনের খোঁজে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ভয়ানক দাঙ্গা লাগানো হচ্ছে দেশে দেশে। মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব তুলে সংখ্যালঘু যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। ফেসবুকের তুচ্ছ পোস্টের কারণে অহরহ মানুষ হত্যার পরেও ফেসবুকের তরফ থেকে পদক্ষেপ নেই, কোন তদন্ত নেই, কারণ এইরকম পোস্ট ভাইরাল বন্ধে ফেসবুকের নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন অফিশিয়াল কর্মী নেই। বরং সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সাথে মনে হয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের একটা গোপন আঁতাত আছে এবং তারা পরস্পরকে দায়মুক্তি দিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করে চলেছে।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে এটাই ফেসবুকের আসল চেহারা ও বাস্তবতা। ফেসবুক এই অঞ্চলকে তার বাজার হিসেবে দেখছে, এখানের সমাজ, সম্প্রদায়, মূল্যবোধ এবং তাদের বাড়িঘর, সম্পত্তি ও জীবন তার কাছে মুখ্য বিষয় নয়। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে মায়ানমারে ফেসবুক রোহিঙ্গা গণহত্যায় ‘প্রত্যক্ষ ভূমিকা’ রেখেছিল, ফলে ২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে ৮ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়। ঐ সময়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এযাবৎকালের ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দেয় এবং এখনো তারা শরনার্থী শিবিরে বাস করছে। জাতিসংঘ তখন ফেসবুকের কাছে নীতিবহির্ভূত এবং ঘৃণ্য গণহত্যায় জড়িত মায়ানমারের সামরিক অফিসারদের ব্যাপারে তদন্ত করতে তথ্য চায় কিন্তু ফেসবুক তাদের তথ্য প্রদানে অস্বীকার করে। অথচ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের খনি দিয়েই ফেসবুক আজ বিশ্বের অন্যতম ধনী কোম্পানি।
ফেসবুকের একই রকম কর্মকাণ্ড সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনা পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে ২০১৮ সালে শ্রীলংকা্য় এবং ২০১২ থেকে আজ ২০২০ সাল অবধি ভারতে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় ফেসবুকের অবস্থান কী ছিল। ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে Newley Purnell এবং Jeff Horwitz একটা প্রতিবেদনে লিখেছেন ফেসবুক সচেতনভাবেই “hate speech policy” নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে আসে এবং ইসলামোফবিয়া ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির বিরাগভাজন হতে চায়নি ফেসবুক কোম্পানি। অত্র অঞ্চলে দ্বন্দ্ব সংঘাতময় নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয় এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থানের পিছনে ফেসবুকের ভূমিকা আছে এমন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ফেসবুকের মূল কাজ বাজার খোঁজা আর বাজারজাতকৃত পণ্যটির মূল কাজ হলো সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বন্ধনকে নস্যাত করে দেয়া। ভারত পৃথিবীর সব থেকে বেশি ফেসবুক (৩২৪ মিলিয়ন) ও হোয়াটস অ্যাপ (৪০০ মিলিয়ন) ব্যবহারকারী দেশ এবং মুলত দক্ষিণ এশিয়াতেই ফেসবুকের প্রধান বাজার। ফেসবুক দীর্ঘদিন চেষ্টা করে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ইন্টারনেট নিজেদের দখলে নিতে। “ফ্রি বেসিক” প্রকল্পের আওতায় গ্রাহকদেরকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিসেবা প্রদানের জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারের সাথে তদবির শুরু করে ফেসবুক। ফেসবুকের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রাহক অল্প কিছু নিয়ন্ত্রিত ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারবে, ফলে এখানে তৈরি হবে ফেসবুকের একচ্ছত্র বাজার।
ভারতের মত দুর্বল কিন্তু ঝামেলাপূর্ণ দেশের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে শক্তিশালী রাজনৈতিক এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কাজ করতে হয়, যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি আর ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি গোপনে আঁতাত করেছেন। বিশ্বব্যাপী মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে ফেসবুক এখন একটা প্লাটফর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, হোয়াটস অ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম একসাথে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। একটা অ্যাপের মাধ্যমেই একজন সবকিছু ব্যবহার করতে পারবে যেমন চীনে আছে ‘উই চ্যাট’ যার মাধ্যমে ভোক্তা ব্যাংকিং সুবিধা, মেসেঞ্জার, অনলাইন গেম খেলা, খাবার হোম ডেলিভারি, সামাজিক যোগাযোগের সুবিধা, গাড়ি ভাড়া নেয়া ইত্যাদি সব সুবিধা ভোগ করে। সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ফেসবুক ভারতে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে সেবা মুল্য পরিশোধের সুবিধা সংযুক্ত করতে যাচ্ছে।
ফেসবুক যখন দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে তার বাজার বিস্তারে ব্যস্ত তখন সামাজিক এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিনির্মাণে কতটুকু আন্তরিক? এপ্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত নাগরিক অধিকার অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকের সমাজকল্যাণমূলক কোন কর্মকান্ড নাই। এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়াতে এই অবস্থা আরো নিদারুণ। ‘ইক্যুয়ালিটি ল্যাব’ পরিচালিত গতবছরের গবেষণায় বেরিয়েছি মারাত্মক হিংসাত্মক, ঘৃণার পোস্ট ভাইরাসের মত অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রতিবাদে ব্যাপক রিপোর্টিংয়ের পরেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সেগুলো সরিয়ে নেয় নি।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এনজিও, আন্দোলনকারীরা ফেসবুকের কাছে হিংসাত্মক মতবাদ ‘হেট স্পিচ’ মুছে দিতে বারবার আবেদন জানায়। এদিকে ফেসবুকের কল্যাণে সমাজে ঘৃণার বাণী ছড়িয়ে পড়ল বানের জলের তোড়ে, ধর্মোন্মাদ মানুষ কয়েক দফায় ভয়াবহ হামলা করল, পিটিয়ে মেরে ফেলল মানুষ, আগুন ধরিয়ে দিলো বাড়িতে কিন্তু ফেসবুকের কোন বিকার নেই। ফেসবুক সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখে নাই। আক্রমণাত্মক পোস্ট নিয়ন্ত্রণে ফেসবুকের দক্ষ কর্মী নেই। দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভাষা বুঝে পোস্ট মূল্যায়ন করতে ফেসবুকের আগ্রহ আছে বলেও মনে হয় না।
ফেসবুক তার ব্যবহারকারীর পোস্ট তদারকি করার জন্য ভীষণভাবে ভাড়া করা তৃতীয় পক্ষের উপর নির্ভরশীল। যার ফলে ভাড়ায় খাটা তৃতীয় পক্ষ তাদের পছন্দমত কর্মী নিয়োগ দিতে পারে ও পোস্টের ‘what’s on your mind’ বিষয়বস্তু যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারে। সুতরাং ফেসবুক আসলে থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে ফলে হিংসাত্মক লেখা, বিষয়বস্তু ছড়ানোর জন্য ফেসবুক দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকের ভাড়া করা তৃতীয় পক্ষের অফিস আছে হয়ত যুক্তরাষ্ট্রে বা পৃথিবীর অন্যকোথাও। যখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুকের একজন কর্মী বাৎসরিক ২৪০,০০০ ডলার বেতন পাচ্ছে সেখানে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভাড়া খাটা লোকটা প্রতিদিন ৬ ডলার হিসেবে বছরে ২,১৯০ ডলার পায়। একদিকে আমেরিকার ফেসবুক কর্মী অস্বাভাবিক বিশাল অংকের টাকা বেতন পায় অন্যদিকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার যারা পোস্ট তদারকির দায়িত্বে আছে তাদের ভাগ্যে বরাদ্দ যৌন হয়রানি, শারীরিক আঘাত এবং মানসিক পীড়া। ফেসবুক তার ব্যবহারকারীর পোস্টের বিষয়বস্তুর তাদারকির মূল লক্ষ্য এবং পোস্টের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করা হয় ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে, তদুপরি তাদের সংখ্যাও কম। দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শ্রমিকরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই বঞ্চিত নয় বরং ভাষাগত দিক থেকেও তারা শোষণের শিকার।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সম্প্রদায়ের বন্ধন ভেঙ্গে দেয়া সম্ভবত ফেসবুকের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার নীলনকশা। ফেসবুকের সাথে সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও ‘Equality Labs’ তাদের গবেষণায় বর্ণনা করেছে কিভাবে ফেসবুক কয়েকটি প্রধান প্রধান ভাষার পোস্টের তদারকি কিভাবে করতে হবে তার দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। একইভাবে যখন হিংসাত্মক কথা প্রচারের পোস্ট আসে তখন ফেসবুক যথাযথ নির্দেশনা দেয় না। ফেসবুকের বাইনারি বিগ ডাটা বুঝতে পারে না আমাদের দেশের আঞ্চলিক প্রেক্ষিতে সামাজিক দমন নিপীড়ন, নির্যাতনের ভাষা কেমন। যেমন হিন্দুদের বর্ণবাদ সংক্রান্ত কোন পোস্টের মধ্যে ঘৃণার বিষবাষ্প ও বৈষম্যের বঞ্চনা থাকলেও বুঝতে পারে না।
বিগত সময়ে সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা বিভিন্ন ফেসবুকের অবস্থান দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় বাকস্বাধীনতার সাফাই গাওয়া ফেসবুকের আত্মপক্ষ সমর্থনের বৃথা চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। পৃথিবীর অন্যতম সামরিকায়ন এলাকা কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসলেই ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাশ্মীরিদের পোস্ট মুছে (সেন্সর করে) দেয়। কাশ্মীরকে ভারত পাকিস্তান দুইদেশই নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এবং দুইদেশই মারমুখী অবস্থানে চিরকাল সদাপ্রস্তুত। কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের অত্যাচার, দমন, হত্যা কারনে বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার লংঘনের দোহাই তখন কোন কাজে আসে না, ফেসবুক আমলেও নেয় না। কাশ্মীরি জনগণের স্বাধিকার আন্দোলনের পোস্ট “Free Kashmir” ফেসবুক সরিয়ে নেয়।
একজন ভারতীয় অনলাইন এক্টিভিস্ট রীতিমত তথ্য উপাত্তসহ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন বিগত তিনবছরে মোদী বা বিজেপি’র সমালোচনাকারীদের ফেসবুক আইডি পাইকারি হারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে ডানপন্থীদের আঈডি নজরদারিতে ছিল যদি তারা কিছু লিখে ফেলে!
পুরো বিষয়টিতে ভারতকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা অতি জরুরী কারণ ভারত শুধু ফেসবুকের সবচেয়ে বড় বাজারই নয় বরং ফেসবুকের আঁখি দাস বা শিবনাথ থুকরাল’র মত উর্ধতন কর্মকর্তারাও ভারতীয় যারা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ফেসবুকের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করেন। ফেসবুক ইন্ডিয়া অফিসের মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়েছে, মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। অত্র অঞ্চলের সমাজে সর্বক্ষেত্রে ঘৃণার বিষ এবং তার ধংসাত্মক আত্মপ্রকাশ সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। ফেসবুক ইন্ডিয়া অফিস রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর ঘৃণার আক্রোশে পরিচালিত নির্মমতাকে নিরবে সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। বিতাড়িত রোহিঙ্গারা যাতে ভারতে পালিয়ে আসতে না পারে তার জন্য প্রচারণা চালায়। অন্যদিকে মায়ানমারে অলিখিত ঘৃণার চাষাবাদের গোড়ায় পানি ঢেলেছে ফেসবুক।
এইবছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের প্রতিবেদনে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী এবং ফেসবুকের সাথে গোপন আঁতাতের খবর ফাঁস হয়ে যায়। এরপরেই ফেসবুকের পাবলিক পলিসি বিভাগের পরিচালক আঁখি দাস তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ফেসবুক ভারতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আঁখি দাসকে তার “বিশাল অবদানের” জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তার আগামী কর্মজীবন আরও বেশি বর্ণাঢ্য হোক সেই ইচ্ছা জ্ঞাপন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আঁখি দাসের শূন্য পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বিজেপি’র ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত শিবনাথ থুকরাল।
আঁখি দাসের পদত্যাগে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। আঁখি দাস পদত্যাগ করলেন এমন এক সময়ে যখন ফেসবুককে “পৃথিবীর মুসলিম বিরোধী সহিংসতা সার্চ ইঞ্জিন” আখ্যা দিয়ে আর্টিকেল প্রকাশিত হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় ফেসবুককে দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়ায় তদারকি বাড়াতে হবে এবং ফেসবুকের উর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে সরাসরি তলব করতে হবে। কারণ ফেসবুকের কারণে অনেক মানুষের জীবন হানি ঘটেছে, অনেক সম্পদের বিনাশ সাধান হয়েছে এবং অনেক মানুষের জীবন এখন সংকটের মুখে।
অনুবাদ : বিকাশ মজুমদার
লেখক : Aman Abhishek, PhD student in media studies at University of Wisconsin-Madison, USA.
মতামত ও বিশ্লেষন বিভাগে প্রকাশিত সকল মতামত লেখকের নিজস্ব এবং এটি State Watch এর সম্পাদকীয় নীতির আদর্শগত অবস্থান ধরে নেওয়া ঠিক হবে না।
আপনার মতামত জানানঃ