জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী কোলোনে এক দুর্বৃত্ত গত শুক্রবার একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, শুক্রবার ভোরে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে কোলোন কেন্দ্রীয় মসজিদে কেরোসিন ঢালতে দেখে ফেলেন এক নিরাপত্তা প্রহরি। খবর আনাদোলুর।
এ সময় কেরোসিনের গ্যালন ও মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায় ওই দুর্বৃত্ত। এ ঘটনার পর মসজিদে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। এছাড়া, আশপাশের সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
সূত্র মতে, স্থানীয়দের কাছে সন্দেভাজনের পরিচয় জানতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। করোলোনের এ মসজিদটি খুবই বিখ্যাত। তুর্কি মুসলিমরা মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, জার্মানিতে কট্টর ডানপন্থি এবং বর্ণবাদী দল নিও-নাজি গ্রুপ বহুদিন ধরেই মুসলিমদের জার্মান ছাড়ার হুমকি দিয়ে আসছে।
ফ্রান্সের পর ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বসবাস জার্মানিতে। দেশটির ৮ কোটি ২০ লাখ মোট জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ৫০ লাখ নাগরিক মুসলিম। এদের মধ্যে ৩০ লাখই তুরস্ক বংশোদ্ভূত মুসলিম।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে জার্মানিতে দুই সপ্তাহের মধ্যে এক মসজিদ দুই দফায় হামলা হয়। জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাডেন উটেমবারগ শহরের এক মসজিদে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগেও ওই মসজিদে হামলা চালানো হয়।
ওই মসজিদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলি ওজদেমির ওই সময় বলেন, নতুন বছরের দিনের শুরুর কিছু আগে সনথেইম শহরের ফেইথ মসজিদ হামলার স্বীকার হয়। এতে ওই মসজিদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় মসজিদের জানালা এবং কাঠের বাংক ভেঙে যায়। আলি বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের মসজিদের ওপর এটি দ্বিতীয় হামলা।
ব্রস্ট ফাউন্ডেশন তাদের এক রিপোর্টে জানায়, জার্মানিতে সম্প্রতি ইসলামোফোবিয়া চোখে পড়ার মতো বেড়েছে৷ উদাহরণ দিতে গিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ তুর্কি এসে বসবাস করতে শুরু করেন৷ মূলত কারখানায় কাজের জন্যই তারা আসতে শুরু করেছিলেন৷ এছাড়াও আশপাশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি থেকেও বহু মানুষ সে সময় জার্মানিতে এসেছেন৷
কখনোই তাদের নিয়ে জার্মান নাগরিকের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি৷ কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বাসহীনতা অনেক গুণ বেড়ে গেছে৷ অধিকাংশ জার্মান ইদানীং বলতে শুরু করেছেন মুসলিমদের সঙ্গে একত্রে থাকা সম্ভব নয়৷ যদিও উলটো মতও আছে৷ কিন্তু সে সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে৷
জার্মানিতে হিজাব নিষিদ্ধ
চলতি বছর জুলাই মাসে ইউরোপের একটি শীর্ষ আদালত কর্মস্থলে মুসলিম নারীদের হিজাব নিষিদ্ধের আদেশ দিয়েছেন। তবে, এ ক্ষেত্রে একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার ওপর এ হিজাব নিষিদ্ধের বিয়ষটি নির্ভর করবে বলে রায়ে বলা হয়।
দেশটির দুই মুসলিম নারীর দায়ের করা মামলায় ওই রায় প্রদান করেন আদালত। আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ওই দুই মুসলিম নারীকে হিজাব পড়ায় চাকরিচ্যুৎ করা হয়। এর প্রতিকার পেতে তারা আদালতে গেলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই রায় দেয় জার্মানির ওই আদালত।
রায়ে আদালত আরও বলেন, কর্মস্থলে নিজের অবয়ব ঢেকে রাখা আইনবিরোধী কাজ। সেবাদানকারীকে অবশ্যই মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে কোনোভাবেই কর্মক্ষেত্রে নিজের মুখ ঢেকে রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান চাইলে ওই কর্মীকে ছাটাই করতে পাড়বে বলে আদেশে বলা হয়।
ওই দুই মুসলিম নারী জার্মানির হ্যামবার্গে একটি শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে কাজ করতেন। হিজাব পড়ার কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে ২০১৭ সালে লুক্সেমবার্গে অবস্থিত ইউরোপীয় আদালত এক আদেশে বলেন, কর্মক্ষেত্রে মাথায় স্কার্ফসহ ধর্মীয় পরিচয় বহন করে এমন কিছু পড়া যাবে না।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪০
আপনার মতামত জানানঃ