ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ ঠেকাতে রাস্তার পাশে থাকা মাছ-মাংস এবং আমিষের খাবারের দোকান বন্ধ হচ্ছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কের পাশ থেকে আমিষজাতীয় খাবারের দোকান সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের চারটি শহরে এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আহমেদাবাদ পৌরসভার রাজস্ব কমিটি এক চিঠিতে বলেছে, গুজরাটের পরিচয় এবং কর্ণাবতী (আহমেদাবাদ) শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে শহরের রাস্তা এবং ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাছ-মাংসসহ আমিষ খাবারের দোকান বন্ধ করতে হবে। আমিষ খাবারের দোকান বৃদ্ধির ফলে নাগরিকদের রাস্তায় চলাফেরায় অসুবিধা হয় ও বাসিন্দাদের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত লাগে।
গেল সোমবার আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন জানায়, স্কুল, কলেজ ও ধর্মীয় স্থানগুলোর ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা সড়কের ওপর থেকে আমিষজাতীয় খাবারের স্টলগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।
করপোরেশনের শহর পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান দেভাং দানি বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, মঙ্গলবার থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।
আহমেদাবাদ পৌরসভার রাজস্ব কমিটি এক চিঠিতে বলেছে, আমিষ খাবারের দোকান বৃদ্ধির ফলে নাগরিকদের রাস্তায় চলাফেরায় অসুবিধা হয় ও বাসিন্দাদের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত লাগে।
দুটি সংস্থার জারি করা আদেশে বলা হয়েছে যে রাস্তায় আমিষ খাবার হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। পাশাপাশি এটি যোগ করা হয়েছে যে এই ধরনের খাবার থেকে ওঠা ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রাজকোট পৌরনিগমের কর্মীরা রাজকোটের ফুলছব চক, লিম্বদা চক এবং শাস্ত্রী ময়দানে আমিষ খাবারের স্টল এবং কিয়স্ক সরিয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে রাজকোটের মেয়র অবশ্য বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র রাস্তা থেকে দখলদারি সরাচ্ছি। তারা বড্ড উপদ্রব সৃষ্টি করে, যানজট সৃষ্টি করে এবং হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়।’
গুজরাটের খেদা জেলার বিজেপির সাবেক আইটি সেলের সভাপতি নন্দিতা ঠাকুর টুইটে লিখেছেন, আমরা বাস্তবতা এড়াতে পারি না। বহু নাগরিক মাছ বিক্রি করে জীবনধারণ করেন। যারা আমিষ খাবার বিক্রি করেন রাস্তার ধারের দোকানে তাদের যেন সরিয়ে দেওয়া না হয়। সরালে বিকল্প জীবিকার সন্ধান করে দেওয়াও প্রশাসনের কাজ হবে।
এর আগেই ভাদোদরা, রাজকোট ও ভাবনগরে রাস্তার ধারে আমিষ খাবারের দোকান বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে পৌরকর্তৃপক্ষ।
ভাদোদরার বিজেপি জনপ্রতিনিধি বলেন, আমি নিজে নিরামিষাশী, কিন্তু যারা আমিষ খান বা বিক্রি করেন তাদের বিরুদ্ধে নই। মাছ, মাংস যারা বিক্রি করছেন তারা সেটা করেই জীবনধারণ করেন। পৌর কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা বলছে, যা সবাই মেনে নেবে। কিন্তু জোর করে শুধু আমিষ খাবারের ক্ষেত্রেই যদি স্বাস্থ্যকর বিষয়টি প্রাধান্য পায় তবে তা হতাশার হবে।
ভাদোদরার মেয়র কেউর রোকাদিয়া বলেছেন, আমরা রাস্তা থেকে কোনও স্টল সরাতে পারি না বা নির্বিচারে কোনও বিশেষ ধরনের খাবার বিক্রি থেকে কাউকে বিরত রাখতে পারি না। তবে খাবার ঢেকে রাখলে অবশ্যই কোনো ক্ষতি নেই, বিশেষ করে আমিষ-ভোজীদের কাছে।
ভাদোদারা পৌর করপোরেশনের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিতেন্দ্র পাটেলকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মাছ, মাংস ও ডিমের স্টল অনেক বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখন সময় এসেছে এর ইতি টানার। একই সঙ্গে বলা হয়, এসব জায়গা থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ।
গুজরাটের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল সোমবার বলেন, বিষয়টি নিরামিষ বা আমিষজাতীয় খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয় নয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ যা খেতে চায়, তা সে খেতে পারে। কিন্তু স্টলে যেসব খাবার বিক্রি হয়, তা ক্ষতিকর হতে পারবে না আবার এসব স্টলের কারণে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ