ভারতে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে ‘বেআইনি ধর্ম পরিবর্তন অধ্যাদেশ’ জারি হয়েছে। একেই কথিত ‘লাভ জিহাদ’ বিরোধী অধ্যাদেশ বলা হচ্ছে। আজ (শনিবার) রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছেন। ভারতে এই প্রথম কোনও রাজ্যে এ ধরণের অধ্যাদেশ কার্যকর হল।
উত্তরপ্রদেশে একের পর এক লাভ জিহাদের ঘটনায় উদ্বিগ্ন যোগী আদিত্যনাথ কয়েকদিন আগে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, “এখনও সময় আছে। সাবধান করে দিচ্ছি। আমাদের মেয়েদের সম্মান নিয়ে যারা খেলবে তাদের জীবন শেষ করে দেব।” সাম্প্রতিক কালে এমন চাঁচাছোলা ভাষায় ভারতের কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কথিত লাভ জিহাদের বিরোধিতা করেননি। তখনি যোগী বলেছিলেন ‘লাভ জিহাদ’ রুখতে এবার তিনি কড়া আইন আনবেন। যেমন কথা তেমনি কাজ এবার করে দেখালেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবারই লাভ জিহাদ রুখতে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। ৪ দিনের মধ্যে সেই অর্ডিন্যান্স অনুমোদন করে দিলেন রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল। ফলে আজ (শনিবার) থেকেই উত্তরপ্রদেশে কার্যকর হলে গেল ‘লাভ জিহাদ’ বিরোধী আইন।
[pullquote]লাভ জিহাদ বিরোধী আইন কার্যকর হওয়ার এবার ভারতের উত্তরপ্রদেশে অবৈধ ভাবে ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করলে কড়া সাজা পেতে হবে। বিয়ের আগে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য ২ মাস আগে নোটিস দিতে হবে। এই আইনে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।[/pullquote]
অর্ডিন্যান্সে বলা হয়েছে, জোর করে বিয়ের নামে ধর্ম পরিবর্তন করলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। নাবালিকা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি নারীকে ধর্মান্তর করলে ৩/১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকার জরিমানা করা হবে। গণ ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে একই মেয়াদের কারাবাস এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা হবে।
লাভ জিহাদ বিরোধী আইন অনুযায়ী, কোনও ধর্ম পরিবর্তন মানবে না সরকার। বিয়ের পরে কেউ ধর্ম পরিবর্তন করতে চাইলে জেলা প্রশাসকের দফতরে আবেদন করতে হবে।
গত ২৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রিসভা লাভ জিহাদ সম্পর্কিত অর্ডিন্যান্সকে অনুমোদন দেয়। এরপরে, এটি অনুমোদনের জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। ওই অর্ডিন্যান্সটি আজ রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল অনুমোদন করেছেন। এবার ৬ মাসের মধ্যে এই অধ্যাদেশটি রাজ্য সরকারকে বিধানসভা থেকে পাস করতে হবে।
লাভ জিহাদ বিরোধী আইন কার্যকর হওয়ার এবার ভারতের উত্তরপ্রদেশে অবৈধ ভাবে ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করলে কড়া সাজা পেতে হবে। বিয়ের আগে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য ২ মাস আগে নোটিস দিতে হবে। এই আইনে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, প্রায় ১০০-র বেশি ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে যেখানে জোর করে ধর্মান্তরণ করা হয়েছে। এই কাজ আটকাতে আইন তৈরি করা জরুরি ছিল। যোগীজীর মন্ত্রীসভা এই কারণেই অর্ডিন্যান্স আনে এবং যেখানে একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নতুন আইন উত্তরপ্রদেশে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং মহিলাদের ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল বলে দাবি করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী।
উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি কথিত ‘লাভ জিহাদ’ রুখতে আইন আনছে মধ্যপ্রদেশ সরকারও । মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র আগেই জানিয়েছেন যে এই বিষয় শিগগিরই বিধানসভায় আইন পাস করা হবে। আইনে এটিকে জামিন অযোধ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং দোষীদের জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে। গেরুয়া শিবিরের আরও দুই রাজ্য হরিয়ানা ও কর্নাটকও ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে কড়া আইনের পথে এগোচ্ছে। গত ৬ নভেম্বর কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা জানান, লাভ জিহাদের নামে ধর্মান্তরকরণের বিরুদ্ধে আইন আনতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ ইতিমধ্যে জানিয়েছেন ‘লাভ জিহাদ’ রুখতে আইন আনার কথা ভাবছে তাদের সরকারও। এ ব্যাপারে হিমাচলপ্রদেশের থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ইস্যুতে গত বছর বিল পাস করেছিল হিমাচলপ্রদেশ বিধানসভা। ইতিমধ্যে অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরাখণ্ড সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ধর্ম পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করতে “পরিবর্তন বিরোধী আইন” “Anti-conversion laws” রয়েছে।
ভারতে দীর্ঘদিন ধরে উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন কথিত ‘লাভ জিহাদ’ শব্দ ব্যবহার করে প্রচারণা চালায়। তাদের দাবি, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে কৌশলে ধর্মান্তর করায়। যদিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাই ‘লাভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করেনি। আইনেও ‘লাভ জিহাদ’ -এর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও থেমে নেই ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদিদের ‘লাভ জিহাদ’ নামের প্রচারণা।
ধর্ম পরিবর্তনের অধিকার রাষ্ট্র ছিনিয়ে নিয়ে মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন করছেন বলে ভারতের বুদ্ধিজীবিমহল মনে করে। বিজেপি সরকার সমর্থিত রাজ্যগুলোতে এই ধরনের উদ্যোগকে ভিন্ন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসাবে তারা দেখছেন এবং তারা মনে করেন এটি অসাম্প্রদায়িক ভারতের সংবিধান বিরোধী কর্মকান্ড ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আপনার মতামত জানানঃ