করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত ভারত। করোনা সংক্রমণের মধ্যেই ভারতে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ আতঙ্ক তৈরি করেছে। দেশটির বহুল জনঅধ্যুষিত উত্তর প্রদেশের একটি জেলায় কমপক্ষে ৮৯ জনের দেহে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭টি শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
চলতি মৌসুমে কানপুরে প্রথম জিকার সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত ২৩ অক্টোবর। উত্তর প্রদেশে জিকার সংক্রমণ শনাক্তের ঘটনা এটাই প্রথম।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো জিকা ভাইরাসও মশাবাহিত। সংক্রমিত এডিস মশার কামড়ে ছড়ায় এ সংক্রমণ। এ রোগে, জ্বর, চুলকানি, পেশি, গাঁটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়াসহ সাধারণ ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক সময় প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। যারা সক্রিয় জিকা সংক্রমণের এলাকায় বাস করেন বা ভ্রমণ করেন তাদেরই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কানপুর সম্প্রতি মশা-বাহিত এই রোগের হটস্পট হয়ে উঠেছে। শহরজুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। জিকা সংক্রমণ রোধে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ অভিযান চালু করেছে।
কেন্দ্র থেকেও সেখানে বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে ৷ স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ৫২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এরা কোনো না কোনো সময় সংক্রমিতদের সংস্পর্শে ছিলেন। কানপুরের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোগটি ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে বেশ কয়েকটি টিম তৈরি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
কানপুরে গত ২৩ অক্টোবরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক ওয়ারেন্ট অফিসার জিকা আক্রান্ত হওয়ার পর আশপাশের এলাকায় থাকা বিভিন্ন মানুষের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে আরও ৩০ জনের শরীরে জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে।
গত শুক্রবার পর্যন্ত জিকা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৬ জনে। শনিবার কানপুরে আক্রান্ত হন আরও ১৩ জন এবং রোববার আরও ১০ জন আক্রান্ত হয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ এ দাঁড়িয়েছে।
কানপুরের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নেপাল সিং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ওই জেলায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে।
ভারতে এর আগে ২০১৭ সালে গুজরাট রাজ্যে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছিল।
মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শিশুদের মস্তিষ্ক শুকিয়ে ছোট হয়ে যায় বলে চিকিৎসকরা ধারণা করে থাকেন।
এই ভাইরাসটি মূলত মশার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। তবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে এক গর্ভবতী নারীও রয়েছেন।
ডা. নেপাল সিং বলেন, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের ওপর নজর রাখা এবং এর বিস্তার ঠেকানোর জন্য কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কতোগুলো দল গঠন করেছে।
কানপুরের জেলা প্রশাসক বিশাক জি জানিয়েছেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তরের র্যাপিড রেসপন্স টিমের সদস্যরা আক্রান্তদের বাড়ি যাচ্ছেন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিস্থিতি। জুলাই, আগস্ট মাস থেকে ভারতে প্রকোপ শুরু হয় জিকার। প্রথমে কেরালা, পরে ধীরে ধীরে দেশজুড়ে সংক্রমণ ছড়ায়।’
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, শহরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ কারণে কর্মকর্তাদের তিনি আরও বেশি তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি যতটা গুরুতর রূপ নিয়েছে তাতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রত্যেক রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সামাল দিতে ভারত যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখনই নতুন করে এই জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সামাল দিতে ভারত যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখনই নতুন করে এই জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিল।
উগান্ডায় ১৯৪৭ সালে বানরের দেহে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাস চিহ্নিত হয়েছিল।মানবদেহে এর প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায়। এরপর থেকে আফ্রিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
১৯৪৭ সালে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত মশা-বাহিত ভাইরাস জিকা ভাইরাস ২০১৫ সালে ব্রাজিলে মহামারি আকারে পৌঁছায়। ওই সময় দেশটিতে হাজার হাজার শিশুর জন্ম হয় মাইক্রোসেফালি নিয়ে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাথা অস্বাভাবিক ছোট এবং মস্তিষ্ক শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। সংক্রমিত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঘটনা বিরল। যারা আক্রান্ত হন তাদের পাঁচজনের মধ্যে মাত্র একজনের শরীরের এর উপসর্গ দেখা দেয়।
এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- হালকা জ্বর, চোখ জ্বালাপোড়া কিংবা লাল হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়ায় ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
জিকা ভাইরাসের চিকিৎসায় এখনো পর্যন্ত কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। নেই কোনো টিকাও। ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা জঙ্গলে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া গেছিল। কিন্তু তারপর এত দিন কেটে গেলেও কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৪
আপনার মতামত জানানঃ