সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীর তীরে স্থাপিত দুই শতাব্দী প্রাচীন পাগলা মসজিদের দানবাক্সের আটটি লোহার সিন্দুক খুলে গণনা করে ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, সর্বশেষ গণনার চার মাস ১৬ দিন পর গণনা করে দানবাক্সে এই টাকা পাওয়া গেছে।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জুন দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। ওই সময়ও দানবাক্স পাওয়া গিয়েছিল ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা। এছাড়া বরাবরের মতো এবারও মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেছে প্রচুর বৈদেশিক ও দেশীয় খুচরা মুদ্রা এবং স্বর্ণালঙ্কার।
জানা যায়, মাদরাসার ১২৭জন ছাত্র, মসজিদের ৩৪জন কর্মচারি ও রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৬০জন কর্মকর্তা-কর্মচারি সারাদিন টাকা গণনা করেন।
আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী সিদ্দিকী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ, শফিকুল ইসলাম, অর্ণব দত্ত, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকতউদ্দিন ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে মসজিদ প্রাঙ্গণে রক্ষিত দানবাক্স খোলা হয়।
এরপর শুরু হয় টাকা বাছাইয়ের কাজ। বাছাইয়ের পর প্রথমে ১২ বস্তায় টাকাগুলো ভর্তি করা হয়। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত টাকা গণনার কাজ চলে। গণনা শেষে রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকাগুলো বুঝে নেন। পাগলা মসজিদের নামে রূপালী ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট আছে। প্রতিবারই দানবাক্স খোলার পর প্রাপ্ত টাকা গণনা করে রূপালী ব্যাংকের হিসাবে জমা দেওয়া হয়। সাধারণত ৩-৪ মাস পরপর এই দানবাক্স খোলা হয়।
দারিদ্র্যের হার বাড়ছে গোটা দেশেই
গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের আয় কমে গেছে, যা দারিদ্র্যের হারকে প্রভাবিত করেছে। এ সময়ে হওয়া একাধিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে বেশ আশঙ্কাজনকভাবেই।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬-এর চূড়ান্ত রিপোর্টে (মে ২০১৯) দাঁড়িয়েছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশে।
করোনা মহামারির প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। তবে জরিপে উঠে আসা সার্বিক দারিদ্র্য হারের তুলনায় রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেশি। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৫৭ দশমিক ৫, ৫৫ দশমিক ৫ এবং ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এই দারিদ্র্যের হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি বেড়েছে। ২০১৬ সালের বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৮ সালের সানেমের গবেষণায় এই হার নামে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশে।
কিন্তু সানেমের ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের গ্রামে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশে খাদ্য সংকট
গত এক বছরে বিশ্বে নতুন করে দুই কোটি মানুষ নতুন করে খাদ্যসংকটে পড়েছে। করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংকট, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে এই বিপুল পরিমাণ মানুষের ভাগ্যে তিনবেলা ন্যূনতম খাবারও জুটছে না।
গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৫০ লাখ। এ বছর তা পৌঁছেছে ১৫ কোটি ৫০ লাখে।
এদিকে, বিশ্বের যে ৫৫টি দেশে খাদ্যসংকটে পড়া মানুষের বাস, তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক খাদ্যসংকট প্রতিবেদন ২০২১-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সামগ্রিক ক্ষুধা পরিস্থিতি বোঝাতে পুষ্টি সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ৫ বছরের কম বয়সী ৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কৃশকায়। আর ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ খর্বকায় বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেঁটে। মূলত অপর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুদের এসব সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কারণে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় এক কোটি অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়েছেন। এর বড় একটা অংশ শহরে থাকলেও গ্রামে তাদের অধিকাংশেরই পরিবার ও আত্মীয়রা থাকেন। তাদের আয় কমে যাওয়ার প্রভাব তাই গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই সমানভাবে পড়েছে। তারা সরকারের করোনার কোনও প্রণোদনা সহায়তাও পাননি।
ফলে এসব পরিবারের শিশুরা আগের চেয়ে খাবার কম পাচ্ছে। চিকিৎসাসেবাও কমে আসছে। সে কারণে এসব মানুষের জন্য আলাদা তহবিল প্রয়োজন। আর আপাতত সারা দেশের দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া শুরু করতে হবে খুব দ্রুতই। নয়তো দেশে দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টিহীনতা বাড়বে।
এসডব্লিউ/এসএস/২২২০
আপনার মতামত জানানঃ