ইরানে মারাত্মক সাইবার হামলা হয়েছে। জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয় ইরানের এমন একটি সরকারি বিভাগে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তুর্কি সংবাদমাধ্যম ইয়েনি শাফাকের প্রতিবেদন থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
মঙ্গলবার ইরানি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ মারাত্মক সাইবার হামলায় ইরানের গ্যাস স্টেশনগুলো বিকল হয়ে গেছে এবং দেশটিতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ আছে।
এখনো কোনো সংগঠন এ সাইবার হামলার দায় নেয়নি। ইরানে জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে এ ধরনের সাইবার হামলা দেশটিতে মারাত্মক ভীতির সৃষ্টি করেছে। ইরানজুড়ে জ্বালানী তেল সংকটের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে ইরানের তেল মন্ত্রণালয় দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থাকে বলেছে, সঙ্কট সমাধানে তারা জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। ঠিক কি কারণে ইরানের গ্যাস স্টেশনগুলো বিকল বা বন্ধ হয়েছে তার বিষয়ে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র মতে, ইরানে সরকারি ভর্তুকি দেয়া জ্বালানি গ্রহণে এক ধরনের স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করা হয়। এ স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করার জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তা লক্ষ্য করে এ সাইবার হামলা করা হয়। এর ফলে রাজধানী তেহরানসহ সারা দেশে গ্যাস স্টেশনগুলি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জেরে ইরানে হওয়া সহিংস বিক্ষোভের বার্ষিকীতে এ হামলার ঘটনা ঘটলো। ওই বিক্ষোভে বহু মানুষ হতাহত হয়েছিলেন।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহেদি দেশবাসীকে ভয় না পেয়ে শান্ত থাকতে বলেছেন। এক বিবৃতিতে ‘জ্বালানির দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই’ উল্লেখ করে জনগণকে ‘চিন্তা না করার’ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেছেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে জ্বালানী সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে এবং এটি খুব শিগগিরই ঠিক করে ফেলা হবে।
জুলাইতেও ইরানের রেল যোগাযোগের ওপর একই ধরনের হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল। তখন ‘৬৪৪১১’ নম্বরটি সিস্টেমে প্রদর্শিত হয়। ইসরায়েলি সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম চেক পয়েন্ট পরে ওই হামলার জন্য একদল হ্যাকারকে দায়ী করে যারা নিজেদের ইন্দ্র বলে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার একদিনের মাথায় একই পরিস্থিতির শিকার হয় পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট। সাইবার হামলাটি চালানো হয় মূলত পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘মিনিস্ট্রি অব রোডস অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট’-এর কর্মীদের ওপর। তাদের কম্পিউটার সিস্টেমকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে হ্যাকাররা। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের পোর্টাল এবং সাব-পোর্টাল সাইটগুলো অফলাইনে চলে যায়।
ইরান দীর্ঘদিন ধরেই ধারাবাহিক সাইবার হামলার সম্মুখীন হচ্ছে। সাইবার হামলা ঠেকাতে দেশটি এরই মধ্যে সরকারি অনেক অবকাঠামো ইন্টারনেট সেবার বাইরে রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর আগে গত বছর ইরান তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল। ওই হামলায় তাদের ২৫ শতাংশেরও বেশি ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানী তেহরান। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছিল ইরান। সূত্র মতে, ‘জাফর-১’ নামে যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রাক্কালে ইরান এই সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল।
সে সময় ইন্টারনেট ব্যবহার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা নেটব্লক বলেছিল, ওই হামলার পর অনেক শীর্ষস্থানীয় নেটওয়ার্ক অপারেটরের সেবা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ফলে জাতীয় টেলিযোগাযোগ পরিসেবা এর সাধারণ পর্যায় থেকে নেমে আসে ৭৫ শতাংশে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭২৪
আপনার মতামত জানানঃ