নিম্নচাপের জেরে একটানা বৃষ্টির ফলে বিপর্যস্ত হিমালয়ের পাদদেশ। নেপাল ও ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের পর সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বন্যা ও ধসের ফলে এই দুটি দেশে মৃতের সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৫০ ছাড়িয়েছে। নদীর পানিও বইছে বিপদ সীমার উপর দিয়ে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। দেশ দুটিতে প্রতিদিনই নতুন মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে।
নেপালে গত তিনদিনের ভারি বর্ষণে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসে ৭৭ জন নিহত হয়েছে। বুধবার দেশটিতে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধারের পর এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। এ ঘটনায় এখন পযর্ন্ত আহত হয়েছে ২২ জন আহত। নিখোঁজ রয়েছেন ২৬ জন। আর কেরালার রাজ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দিল কুমার তামাং বলেন, ভারতের সীমান্তসংলগ্ন নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চথারে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিম নেপালের ইলমে ১৩ জন ও দোতিতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাকিরা মারা গেছেন পশ্চিম নেপালের বিভিন্ন এলাকায়।
দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যা এবং ভূমিধসে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক হাজার ৭০০ ডলার সহায়তা এবং সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে।
টানা ভারি বর্ষণের কারণে দেশটির রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার পশ্চিমের সেতি গ্রামে বন্যায় গত দু’দিন ধরে আটকা পড়া ৬০ জনকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে।
দেশটির পুলিশের মুখপাত্র বসন্ত কুনওয়ার রয়টার্সকে বলেছেন, গতকাল থেকে অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকারীরা ওই গ্রামে পৌঁছাতে পারছেন না। তবে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা এখনও চলছে।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ধান এবং অন্যান্য ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া দেশজুড়ে নদ-নদীর পানি বেড়ে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এবং ভূমিধসও হয়েছে। বিরাটনগর শহরের একটি বিমানবন্দরের রানওয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে।
প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে নেপালে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। সাধারণত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ শুরু হয়। কিন্তু চলতি বছরের অক্টোবরেও দেশটিতে বৈরী আবহাওয়া দেখা দিয়েছে।
নেপালের আবহাওয়া বিভাগ আগামী দুই দিনে দেশের কিছু কিছু স্থানে ভারি বৃষ্টি এবং পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি তুষারপাতের পূর্বাভাষ দিয়েছে। বর্ষণ-বন্যায় দুর্যোগপ্রবণ নেপালে প্রত্যেক বছর শত শত মানুষের প্রাণহানি ও হাজার হাজার নেপালি রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।
এদিকে, বুধবার ভারতের উত্তরাখন্ডের রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সকালে নৈনিতালে ভারী বর্ষণের পর বেশ কয়েকটি ভূমিধস হয়েছে। এদিন সাতটি আলাদা ঘটনায় অঞ্চলটিতে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়। স্থানীয় কর্মকর্তা প্রদীপ জৈন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ভূমিধসের ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় আলমোরা জেলায় অপর একটি ভূমিধসের ঘটনায় একটি বাড়ির পাঁচ বাসিন্দা প্রাণ হারায়।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত সোমবার উত্তরাখন্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পরে সেসব এলাকায় বন্যা ও ভূমিধস হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপদ্রুত এলাকার স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের ধর্মীয় ও পর্যটনসংক্রান্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভারতের আবহাওয়া দপ্তর আভাস দিয়েছে, অঞ্চলটিতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এদিকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কোসি নদীর পানিতে রামগড়ের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এমন অবস্থায় সেখানকার একটি রিসোর্ট আটকা পড়েছেন শতাধিক পর্যটক।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় আগামী কয়েক দিনে আরও বেশি এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, রাজ্যের অনেক বাঁধে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বড় নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে কেরালায় ভারী বৃষ্টিপাতের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ