
ব্রিটেনের মেট্র্রোপলিটন পুলিশ নারীদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ৬৫০ জন পুলিশ অফিসার নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। যারা কিনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু যেখানে পুলিশ অফিসার দ্বারা একজন নারী ধর্ষণ ও হত্যা হয়, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার নিয়োগেও অনিরাপত্তায় ভুগছেন ব্রিটেনের নারীরা।
ব্রিটেনে সারাহ এভারার্ড নামের একজন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে এক পুলিশ অফিসারকে দোষী স্বাবস্ত করা হয়েছে। মূলত লকডাউন চলাকালে আইন লঙ্ঘনের মিথ্যা অজুহাতে তরুণী এভারার্ডকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে দেশটির পুলিশের কর্মকর্তা ওয়েন কুজেন্স। যাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই পুলিশ অফিসার তরুণীর বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারেন্ট দেখিয়ে ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতের বিচারক বলেন, এই মামলাটি ধ্বংসাত্মক, মর্মান্তিক এবং একেবারে নৃশংস। কুজেন্সকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, আপনি আপনার পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং আপনার অনুশোচনার কোনো প্রমাণ নেই। বিচারক ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে জঘন্য বলে বর্ণনা করে আরো বলেন, মামলার ভয়াবহতা এতটাই ব্যতিক্রমী যে এটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশের নিশ্চয়তা দেয়।
সারাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশটিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়। সারাহর নিখোঁজের ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয় ব্রিটেনে। ওসব বিক্ষোভে এক দিন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনও যোগ দিয়েছিলেন। সারা দেশে রাস্তায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রতিবাদের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করে।
সেই তদন্ত চলাকালীনই পুলিশের বহু অফিসারের বিরুদ্ধে এমন অপরাধের ঘটনা এক এক করে উঠে আসতে শুরু করে। তদন্ত এগোতেই এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত পুলিশ অফিসারদের যে সংখ্যাটা উঠে আসে, তা দেখে আঁতকে ওঠেন তদন্তকারীরা।
অভিযোগ, ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা, শিশু নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত প্রায় দু’হাজার পুলিশ। গত চার বছর ধরে তারা এই ধরনের অপরাধ করছেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনা ইতিমধ্যেই শোরগোল ফেলে দিয়েছে গোটা ব্রিটেনে। খবর আনন্দবাজার
ফ্রিডম অব ইনফর্মেশন-এর তথ্য বলছে, ২০১৭ থেকে গত চার বছরের মধ্যে ৩৭০টি যৌন হেনস্থা, ১০০টি ধর্ষণ এবং ১৮টি শিশু নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে যার সবক’টির সঙ্গেই জড়িত পুলিশকর্মীরা।
এদিকে সারাহ এভারার্ডকে হত্যার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর সাবিনা নেছার হত্যা আবারও নারীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। আর এই মৃত্যুর পর কমিশনার ক্রেসিডে ডেককে পদত্যাগ করার জন্য বলছে দেশটির নারী সংগঠন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে সারাহ এভারার্ডের এই হত্যাকাণ্ডের পর সাদা পোষাকের পুলিশ অফিসারের কাছে নিজের সমস্যার কথা জানাতে ভয় পাচ্ছেন ব্রিটেনের নারীরা।
বিষয়টি নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নারীদের জন্য বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে নারীদের সেই পুলিশ অফিসারকে প্রশ্ন করতে হবে কেন তার রাস্তা আটকানো হল, আর কোথা থেকে এসেছে। একই সাথে সেই পুলিশ অফিসার তার রেডিও অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করছে কিনা তাও দেখতে হবে। প্রয়োজন হলে রেডিও অপারেটনের সাথে ভুক্তভুগী নিজে যোগাযোগ করতে পারেন। তার পরও যদি কোন ধরনের বিপদ মনে হয় তাহলে আশ-পাশের মানুষের কাছে সাহায্য নিতে হবে। রাস্তার পাশে কোন ঘরে নক করতে হবে। একই সাথে ৯৯৯ এ কল করার জন্য অনুরোধ করেছেন তারা।
মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এখন সাদা পোশাকের পুলিশ অফিসারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছে নারীদের নিরাপত্তা দেওয়া।
অন্যদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গত নভেম্বর থেকে ২ হাজারের বেশি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা নারী নির্যাতন, নারীদের হয়রানী ও শিশুদের যৌন হয়ারানী করেছে।
তাই আপনার চারপাশে এমন কিছু দেখলে বা সন্দেহ হলে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ