গত কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ সিরিয়াল কিলার বলা হচ্ছে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের প্রাক্তন পুলিশকর্তা ৫৩ বছর বয়সী মিখাইল পপকভ। যদিও ১৯৯৮ সালে পুলিশ বাহিনী ত্যাগ করেন পপকভ। সূত্র মতে, ১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৭৭ জন মহিলা ও ১ জন পুলিশকে হত্যা করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। যদিও এই সংখ্যা নিয়ে আছে মত পার্থক্য। কোথাও ৫৫ তো কোথাও সংখ্যা ৮২। ২০১৫ সালে ২২ জনকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয় পপকভকে। পরে জানা যায় আরও অন্তত ৫৬ জনকে হত্যা করেছেন তিনি।
পপকভের হাতে নিহত নারীদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ঐ নারীদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে হত্যার আগে তিনি ধর্ষণ করেছেন বলে জানা যায়। ইর্কুতস্ক এলাকার কাছে আঙারাস্ক শহরের আশপাশে একটি কুড়াল ও হাতুড়ি দিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ চালাতেন পপকভ। খুন করবার পর শিকারদের দেহ খন্ড-বিখন্ড করে আশেপাশের জঙ্গলে, রাস্তার পাশে বা স্থানীয় একটি সমাধিস্থলে ফেলে দিত সে।
মহিলাদের সাহায্য করবার নামে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে খুন, এই ছিল পপকভের খুন করার পদ্ধতি। গভীর রাতে মহিলাদের গাড়িতে করে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাদের হত্যা করতেন পপকভ।
খুন করবার সময় তিনটি ঘটনায় পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করে ছিল পপকভ। ২০১২ সালে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তারপরেই হেফাজতে নেওয়া হয় তাকে।
পুলিশ ও আইনজীবিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে খুন করবার সময় এক বিকৃত আনন্দ পেত পপকভ। সেটাই একের পর এক খুন করতে প্ররোচনা দিত তাকে।
সূত্র মতে, নিজের মেয়ের স্কুলের শিক্ষিকাকে খুন করে তারই শেষকৃত্যের জন্য টাকা দিয়েছিলেন। তার মাত্র কদিন পরেই পালাক্রমে পুলিশের গাড়িতে তুলে ধর্ষণ করে খুন করেন নিজের মেয়ের স্কুলে পড়ুয়া দুই স্কুলছাত্রীকেও। পুলিশের পোশাক পরে নাইটক্লাবের সামনে বেশ নিয়ম করেই অপেক্ষা করত ওয়ারওফ। কোন মেয়ে একা বের হলেই তাকে সাহায্য করার নামে গাড়িতে তুলে নৃশংস কায়দায় ধর্ষণ শেষে হত্যা করত। মোট কথা যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করেই এই সিরিয়াল কিলার একধরনের পাশবিক আনন্দ পেতেন । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অনেককে খুন করার পর তাদের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলেছিল এই ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার। অনেকের দেহ ছিঁড়ে বের করে এনেছিল হৃৎপিণ্ড। খুন করার আগে ও পরে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
২০১২ সালে সাইবেরিয়ার ইর্কুতস্ক এলাকায় একটি খুনের ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষা করে। ডিএনএ’র রিপোর্ট আর আর গাড়ির চাকার দাগের সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, কয়েকটি দেহের আশেপাশেই পপকভের ‘নিভা’ গাড়ির চাকার দাগ পাওয়া যায়। তদন্তকারীরা আশেপাশের এলাকার সব নিভা গাড়ির মালিকের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করলে ধরা পড়েন পপকভ।
প্রথমবার ধরা পড়ার পর একপর্যায়ে ২০টি খুনের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন পপকভ। তার হাতে খুন হওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী ভুক্তভোগী নারীর বয়স ছিল ১৫। পপকভের নিজের বক্তব্য অনুযায়ী, আঙারাস্ক শহরকে দুশ্চরিত্র নারীদের কবল থেকে ‘বিশুদ্ধ’ করার অভিযানে নেমেছিলেন তিনি।
প্রথমে তার বিরুদ্ধে ২২ জনের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয়ে ইর্কুতস্কের একটি আদালত। তবে অন্যান্য হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্তও শুরু হয়ে যাওয়ায় কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে পুলিশের হেফাজতেই রাখা হয়। সেখানে তার সাথে থাকা আরেক বন্দীকে তিনি জানান যে ২২ জনের বাইরে আরো অনেক মানুষকেই তিনি খুন করেছেন।
যদিও তার এই অপরাধের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে অনুসন্ধান বলছে সম্ভবত স্ত্রী’র অবৈধ সম্পর্কের জেরেই মাথা বিগড়ে যায় পপকভের। হঠাৎ একদিন মনে হয় যেভাবেই হোক একজন মেয়েকে খুন করতে হবে। সেই শুরু। এরপর থেকে রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশের পোশাকে, পুলিশের গাড়ি নিয়ে নাইটক্লাবের সামনে অপেক্ষা করত পপকভ। কোন মেয়ে একা বেরোলেই তাকে সাহায্য করার নামে গাড়িতে তুলে ধর্ষণ শেষে হত্যা করত।
বিচারের আদালতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ঠিক কতজনকে ধর্ষণ আর খুন করেছেন? কিন্তু তার সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি মিখাইল ওয়ারওফ নামের ভয়ংকর এই ঠান্ডা মাথার খুনি। তবে আদালতের চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ আর তথ্য বলছে ৮২ জন নারীকে ধর্ষণের পর খুন করেছেন পপকভ। তবে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পপকভকে মানসিকভাবে সুস্থ বলে ঘোষণা করা হলেও তার মধ্যে মানুষ হত্যা করার এক ধরণের ‘আবেগপূর্ণ আকর্ষণ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবিরা।
হত্যা করা মানুষের সংখ্যার হিসেবে সোভিয়েত আমলের সিরিয়াল কিলার আন্দ্রেই চিকালিতো বা পরবর্তী সময়ের ‘চেসবোর্ড কিলার’ নামে খ্যাত আলেক্সান্দার পিচুশকিন, যারা যথাক্রমে অন্তত ৫২ জন ও ৪৮ জনকে খুন করেছিলেন, দু’জনকেই পেছনে ফেলেছেন মিখাইল পপকভ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯২০
আপনার মতামত জানানঃ