রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগ্রহ হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো। চাহিদার তুলনায় ক্রমেই সংস্থাগুলোর সহায়তার পরিমাণ কমছে। ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দাতা দেশগুলো। পরিস্থিতি এমন যেন রোহিঙ্গাদের পুরো দায় বাংলাদেশের। সূত্র মতে, চলতি বছরে প্রথম ৮ মাসে চাহিদার মাত্র ৩৪ শতাংশ অর্থ নিপীড়িত এ জনগোষ্ঠীর জন্য এসেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ৬৬ শতাংশ।
আরও জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বছরই রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য চাহিদার পুরো অর্থ আসেনি। আর ২০১৯ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা অর্থায়ন আগের বছরের তুলনায় অব্যাহত ভাবে কমছে।
রোহিঙ্গা নিয়ে ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএসসিজির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বা যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছিল ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে চলতি বছরের আট মাসে সহযোগিতা পাওয়া গেছে ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা ২০১৭ সালের পর থেকে প্রথম ৮ মাসের তুলনামূলক হিসাবে সবচেয়ে কম।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত দাতারা রোহিঙ্গাদের জন্য ২৬২ কোটি ডলার অর্থ সহযোগিতা করেছে। আর গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ১৮ কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
খাতওয়ারি হিসাবে, জেআরপির অর্থের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সমন্বয় ও কর্মী স্বাস্থ্য খাত, চাহিদার ৭৯ শতাংশ। কোনো অর্থই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি লজিস্টিকস বা পরিচালন খাতে।
আর সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা এবং ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন খাতে। এ দুই খাতে চাহিদার ৩ শতাংশ করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তায় যথাক্রমে চাহিদার ১৫ ও ১৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছরই চাহিদার অর্থ কমতে থাকা উদ্বেগের। অর্থায়নের প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরো দায় বাংলাদেশের কাঁধে চলে আসবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশ, যেখানে আমাদেরই সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিকূলতা রয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের আলাদা করে দায়িত্ব নেওয়া অবাস্তব। চলতি বছর যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা অর্থায়ন ৪০ শতাংশ কমিয়েছে। এ বাস্তবতাকে মাথায় রেখে রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
আইএসসিজি তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অর্থ সহযোগিতা করেছে; মাত্র ১১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। আর অর্থ সহযোগিতার দিক থেকে দ্বিতীয় যুক্তরাজ্য। এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই বেশি সহযোগিতা পাওয়া গেছে।
পূর্বের দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এতে অংশ নিয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত দিয়েছে ১০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ সহযোগিতা করেছে সাড়ে ৪ লাখ ডলারের মতো।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৯ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৬৯ শতাংশ এবং ২০২০ সালে চাহিদার ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থ সহযোগিতা পেয়েছে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত, আবার বৈদেশিক সাহায্যও কমে আসছে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বড় সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি ত্রাণ সংস্থা ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, দাতারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা না করে তাহলে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ নিয়েও বাংলাদেশ আর্থিক সংকটে পড়বে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের দুই ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইকোনমি নিয়ে ভাবতে হবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার এবং তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে সেই সময় যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের চাপ দিতে হবে। তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১৫২
আপনার মতামত জানানঃ