তাইওয়ান-চীনের সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে। তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্মাণের আভাসের পর থেকেই চীন তাইওয়ানের আকাশ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বহুদিন ধরেই। এবার তাইওয়ানের আকাশে রেকর্ড পরিমাণ যুদ্ধবিমানের মহড়া চালিয়েছে চীন। নিজেদের আকাশসীমায় শুক্রবার (১ অক্টোবর) চীনের ৩৮টি সামরিক বিমান অনুপ্রবেশ করে বলে অভিযোগ করেছে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ।
এটিকে চীনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ বলেও অভিহিত করেছে তারা। পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম চীনের এমন বিমান দুইবার তাদের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে। চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনে তাইওয়ান। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করতেই তাইওয়ানের আকাশে যুদ্ধবিমানের এইসব মহড়া। শনিবার (২অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নিউক্লিয়ার বোমা ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এসব জঙ্গি বিমান দুই দফায় তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে। চীনের এই যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে ১৮টি জে-১৬ ও ৪টি এস-৩০ ফাইটার জেট, পারমাণবিক বোমা পরিবহনে সক্ষম দুটি এইচ-৬ বম্বার জেট একটি সাবমেরিন বিধ্বংসী সামরিক উড়োজাহাজ ছিল। তাইওয়ান পাল্টা যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ও ক্ষেপনাস্ত্র ছুঁড়ে বিমানগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
একটি বিবৃতিতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার চীনের ২৫টি বিমান পারতাস দ্বীপপুঞ্জের কাছ দিয়ে উড়ে যায়। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় ১৩টি বিমান একই জায়গায় মহড়া দেয়।
এসময় চীনা বিমানগুলোকে সতর্ক করার জন্য যুদ্ধবিমান পাঠানোর পাশাপাশি তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও মোতায়েন করে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা মানচিত্রে দেখা যায় প্রথম পর্বে চীনা বিমানগুলো এটলের প্যারাতাস দ্বীপের কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং দ্বিতীয় পর্বের বিমানগুলো বাশি চ্যানেলের উপর দিয়ে উড়ে যায় যা তাইওয়ানকে ফিলিপাইন থেকে আলাদা করেছে।
চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের অধিভুক্ত প্রদেশ হিসেবে দাবি করে আসছে এবং এই দাবিকে শক্তিশালী করতে তাইওয়ানের ওপর রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলছে দেশটি। কিন্তু এক সময়ের সার্বভৌম দেশ তাইওয়ান বরাবরই চীনের এই দাবি অস্বীকার করে নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষে অনড় অবস্থানে থেকেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বেড়েছে এবং দ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণে পেতে শক্তি ব্যবহারের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে চীন।
চীন তাইওয়ানকে একটি নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে, কিন্তু তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে আসছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে তাইওয়ান। কিন্তু চীনের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ না করতে ওয়াশিংটন সতর্ক করে আসছে দেশটি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বেড়েছে এবং দ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণে পেতে শক্তি ব্যবহারের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে চীন। প্রায় সময় চীনের যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে, এমন অভিযোগ তাইপের।
উল্লেখ্য , চীনের ‘ এক দেশ , দুই নীতিতে ’ সর্বোচ্চ মাত্রায় স্বায়ত্তশানের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংও সেভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে দেশটিকে চীনের হাতে হস্তান্তর করে ব্রিটেন। তাইওয়ানকেও সেই প্রস্তাব দিয়েছে চীন , কিন্তু দেশটির অধিকাংশ বড় রাজনৈতিক দল তা প্রত্যাখ্যান করছে ।
আপনার মতামত জানানঃ