ক্ষমতার পটপরিবর্তনে আফগানিস্তান এখন এক চরম মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছে। দেশটিতে ব্যাপক খাদ্যঘাটতি হয়েছে, বেড়েছে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা। আফগানিস্তানে নতুন করে গৃহহীন হওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই নারী এবং শিশু। বৃহস্পতিবার এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে জাতিসংঘের তরফে।
জাতিসংঘের আফগানিস্তান বিষয়ক একাধিক দপ্তরের দাবি, তালিবান আগ্রাসনের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেদেশের নারীরা। বাদ যায়নি শিশুরাও, বিশেষ করে শিশুকন্যারা। তালিবান যোদ্ধাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে ঘর ছেড়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
বার্তা সংস্থা এএনআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথ্যটি এমন সময়ে প্রকাশ্যে এলো যখন আফগানিস্তানে মানবিক সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা চাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের সংস্থার মতে, সহিংসতার প্রভাব নারী এবং শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ছিল।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ইউএনএইচসিআরের কার্যক্রম মূলত সরকারকে সহায়তা করা। যারা বিগত কয়েক বছর ধরে আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর আসন্ন তীব্র শীত মৌসুমের জন্য ৩ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি, আশ্রিত এবং মূল ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করতে অনুদান তহবিল ব্যবহার করবে।
কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাদিয়া ম্যাডসবার্গ বলেন, নারী ও শিশুদের প্রভাবিত করা এটি একটি বহুমুখী সংকট। আমরা আশা করছি, এই সহায়তা পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীন আফগান পরিবারদের জন্য অর্থবোধক হবে।
তথ্যটি এমন সময়ে প্রকাশ্যে এলো যখন আফগানিস্তানে মানবিক সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা চাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের সংস্থার মতে, সহিংসতার প্রভাব নারী এবং শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ছিল।
জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক দপ্তরের হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জানিয়েছেন, আগস্ট মাসে তালিবানের হাতে কাবুলের পতনের পরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সেদেশের পরিস্থিতি। তালিবানী বাহিনীর নৃশংসতার হাত থেকে নারী এবং কন্যা সন্তানদের বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ত্রাণের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
অনেক আগে থেকেই আফগান-পাকিস্তান এবং আফগান-ইরান সীমান্তের বিভাজন রেখা মুছে গেছে সারি সারি আদিঅন্তহীন রিফিউজি ক্যাম্পের কারণে। সীমান্তরক্ষী নয়, উদ্বাস্তু নারী, পুরুষ, শিশুরাই সেখানে প্রধান মুখ। তাদের অস্থায়ী আবাস আর সম্বলই সেখানকার দৃশ্যমান স্থাপনা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আফগান রিফিউজির সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তান নামক ভূখণ্ডটি জন্মভূমি ও নিজস্ব দেশ হলেও সেদেশের ২.৫ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন, দেশছাড়া, উদ্বাস্তু বা রিফিউজি, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বাধিক এবং বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহৎ। বাস্তুহারা আফগান রিফিউজিদের সিংহভাগ আশ্রয় পেয়েছেন পাকিস্তানে। দ্বিতীয় আশ্রয়দাতা দেশ ইরান।
আফগান সীমান্তবর্তী মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে (তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান) আশ্রয় লাভের বিশেষ সুযোগ পান না বিপন্ন আফগানরা।
তালিবানদের ক্ষমতা দখলের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বের বহু দেশই তাদেরকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। দূরের দেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশকেও খোদ আমেরিকা সুপারিশ করেও আফগান নতুন রিফিউজিদের নিতে সম্মত করাতে পারছে না।
সাম্প্রতিক সঙ্কটে সৃষ্ট অগণিত রিফিউজিদের আগেই যে ২.৫ মিলিয়ন নিবন্ধিত আফগান রিফিউজি রয়েছেন দেশের বাইরের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে, তাদের অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। বছরের পর বছর কয়েকটি প্রজন্মের জন্ম ও বেড়ে ওঠার ঘটনা আবর্তিত হচ্ছে ক্যাম্পের অমানবিক পরিস্থিতিতে। সেই ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকেই আফগানিস্তানে সংঘাতের ‘বাই-প্রোডাক্ট’ হিসেবে উদ্বাস্তুকরণ শুরু হয়। তারপর গত ৪২ বছরে আফগানিস্তানে দফায় দফায় বেড়েছে সংঘাত, বেড়েছে রিফিউজির সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তান থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন নিবন্ধিত শরণার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে বলা হলেও তার বাইরেও নানা দেশে আছেন বহু অনিবন্ধিত আফগান। সর্বশেষ চিত্র দেখে এটাই ধারণা করা হচ্ছে যে, আফগান রিফিউজির সংখ্যা আরো বাড়বে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুনভাবে উদ্ভূত রিফিউজি সমস্যা নিয়ে জাতিসংঘের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে একাধিক এজেন্সি কাজ করছে। তাদের কাজের মধ্যে এখন প্রধানত গুরুত্ব পাচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়গুলো। তাছাড়া গৃহহীন মানুষদের জরুরি আশ্রয়, খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী প্রদান এবং দুর্বল বাস্তুচ্যুত মানুষকে জরুরি সেবা প্রদানের বিষয়গুলোও প্রাধান্য পাচ্ছে। আফগানিস্তানের লাগাতার সংঘাতের সমান্তরালে এহেন উদ্বাস্তুকরণের বাস্তবতা চরম মানবিক বিপর্যয়ের করুণ চিত্রকেও উপস্থাপন করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেআইচ/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ