নৌকায় চড়ে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৬৮৬ অভিবাসী ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ লাম্পেদুসায় পৌঁছেছে। মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের বহনকারী নৌকা লাম্পেদুসা দ্বীপে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে। অভিবাসীদের মধ্যে মরক্কো, সিরিয়া, বাংলাদেশ এবং মিশর থেকে আসা ব্যক্তিরা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মহিলা এবং শিশু রয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত এটিই ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সবচেয়ে বড় দল।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদসংস্থা আনসা বলেছে, গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ৬৮৬ অভিবাসীকে নিয়ে একটি নৌকা ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ লাম্পেদুসায় পৌঁছেছে। পরে পুলিশের উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের আরেকটি দল ছোট নৌকায় করে সেখানে পৌঁছায়।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, করোনা মহামারিতে সংক্রমণ এড়াতে অভিবাসীদের স্বাস্থ্যবিধি পালনে কোয়ারেন্টাইনের জন্য অন্য একটি নৌযানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
অভিবাসীদর ঢল ভালোভাবে মোকাবিলার জন্য ইতালি বারবার ইউরোপের অন্য দেশগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়ে আসছে। কারণ ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টাকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অন্যতম অবতরণস্থল ইতালির দক্ষিণের লাম্পেদুসা দ্বীপ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আনসা বলছে, ১৫ মিটার একটি মাছ ধরার নৌকায় ৬৮৬ জন অভিবাসী লাম্পেদুসায় পৌঁছে। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় পাঁচ অভিবাসীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অভিবাসীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ, মিসর, চাদ, মরক্কো, সিরিয়া, সুদান, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া এবং সেনেগালের নাগরিক।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বলছে, ‘একটি নৌকায় চেপে [ইতালির উপকূলে] পৌঁছানো মানুষের সংখ্যা এই বছরে এটিই সবচেয়ে বড়।’ ইউএনএইচসিআর এও বলছে, ‘২০১৬ সাল থেকে এক নৌকায় এত মানুষ পৌঁছানোর রেকর্ড আর নেই।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, করোনা ভাইরাস কোয়ারেন্টিন বিধি পালনের জন্য ওই অভিবাসীদের এখন অন্য একটি নৌযানে সরিয়ে নেওয়ার কথা। সম্প্রতি ইতালি অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরও করোনা টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
অবৈধ পথে ইউরোপে পৌঁছাতে মরিয়া মানুষের পছন্দের পথ হলো সিসিলির লাম্পেদুসা দ্বীপ। আফ্রিকার কাছেই এটি অবস্থিত। লিবিয়াভিত্তিক মানবপাচার চক্রগুলো এই সাগরপথেই লোকদের ঠেলে দেয়।
তবে ইতালিতে অভিবাসীদের পৌঁছানোর এই সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় অনেক কম। ওই সময় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে দারিদ্র্যতা এবং সংঘাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে লাখ লাখ মানুষ বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছান।
সিসিলি দ্বীপের একটি অঞ্চলের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর লুইজি পেট্রোনাগিও আবারো শঙ্কা প্রকাশ করে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ” রাতে লিবিয়া থেকে লাম্পেদুসায় বিপুল পরিমাণ অভিবাসীর অবতরণ, আমাদেরকে আবারও একটি অপরাধী সংগঠনের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলছে। একমাত্র আন্তর্জাতিক বিচারিক সহযোগিতাই পারে অনিয়মিত অভিবাসন এবং অভিবাসীদের প্রতি নজিরবিহীন সহিংসতা ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক মানবাধিকারের মর্মান্তিক লঙ্ঘন রোধ করতে। মূলত অভিবাসীরা নিজেরাই এসব চক্রের কাছে ভুক্তভোগী হচ্ছে যেখানে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।”
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতালি উপকূলে প্রায় ৪৪ হাজার ৮০০ অভিবাসী পৌঁছেছেন। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ হাজার ৫১৭ জন বেশি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৪
আপনার মতামত জানানঃ