আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরের কেন্দ্রস্থলে তালিবান ক্রেনে একটি মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে। আজ শনিবার এক প্রত্যক্ষদর্শী এ খবর জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
হেরাত শহরের কেন্দ্রস্থলের পাশেই একটি ফার্মেসি চালান ওয়াজির আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি জানান, ওইখানে চারটি মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়। তিন মৃতদেহ সরিয়ে দিয়েও আরেকটি মৃতদেহ প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
সিদ্দিকী আরও জানান, তালিবান ঘোষণা দিয়েছিল যে ওই চার ব্যক্তি ছিনতাই করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
তালিবানের নিয়োগ দেওয়া হেরাত জেলা পুলিশের প্রধান জিয়াউল হক জালালি জানান, বাবা-ছেলেকে অপহরণ করেছিলেন ওই চার ব্যক্তি। পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর বাবা-ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান জিয়াউল হক।
তিনি আরও বলেন, এক তালিবান সদস্য ও একজন বেসামরিক ব্যক্তি গুলি বিনিময়ে আহত হয়েছেন। ক্রস ফায়ারে ওই চার অপহরণকারী নিহত হয়েছেন।
এদিকে, এক দিন আগেই তালিবানের সাবেক মোর্যাধল পুলিশের প্রধান মোল্লা নূরুদ্দিন তুরাবি জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানে শিরচ্ছেদ ও অঙ্গচ্ছেদের মতো কঠোর শাস্তি ফের চালু করা হবে।
কুখ্যাত এই তালিবান নেতা বর্তমানে আফগানিস্তানের কারাগারগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন। বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেছিলেন, নিরাপত্তার জন্য অঙ্গচ্ছেদ ফের চালু করা প্রয়োজন।
তবে, নম্বইয়ের দশকের মতো এবার জনসম্মুখে এসব শাস্তি নাও দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, এসব শাস্তি জনসম্মুখে দেওয়া হবে কী না তা নিয়ে তালিবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীরা আলোচনা করছেন। আলোচনার পর এ ব্যাপারে তারা একটি নীতিমালা গঠন করবেন।
তালিবানের প্রথম দফার শাসনামলে শিরশ্ছেদ মতো কঠোর শাস্তি সাধারণত কাবুলের স্টেডিয়ামে কিংবা ঈদগাঁয়ের মতো জন সমাগমস্থলে দেওয়া হতো।
এর আগে আফগানিস্তানের সরকারি সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের শিরচ্ছেদের পর তালিবান যোদ্ধাদের উল্লাস করার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
অনলাইনের চ্যাটরুমে ভিডিওটি শেয়ার করা হয় বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি মেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তালিবানের যোদ্ধাদের ‘মুজাহিদিন’ বলে চিৎকার ও মাটিতে পড়ে থাকা মাথাবিহীন দেহের চারপাশে উল্লাস করতে দেখা যায়। তালিবানের ছয়জন যোদ্ধা লাশটি ঘিরে রাখে এবং তাদের হাতে থাকে রাইফেল ও রক্তমাখা ছুরি।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাঢ় সবুজ রঙের ইউনিফর্ম পরা যে ব্যক্তির লাশ মাটিতে পড়ে ছিল, তিনি আফগান সৈন্য বলে ধারণা করা হয়। কারণ আফগান সামরিক বাহিনীকে এ ধরনের ইউনিফর্ম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
রক্তমাখা ছুরি হাতে দুই ব্যক্তি মুজাহিদিনদের নামে স্লোগান দেন এবং ছুরি আকাশে ছুড়ে মারেন। এক পর্যায়ে তারা চিৎকার করে তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার প্রশংসা করতে শুরু করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের এমন সহিংস চেহারা পুনরায় ফিরে আসবে এমন আশঙ্কা বরাবরই ছিলো। যতই তালিবানরা ক্ষমা প্রার্থনা করুক কিংবা নিজেদের পরিবর্তন নিয়ে আস্থা দিক, তাতে করে তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব ছিলো না। এখন একে একে তালিবানের বর্তমান রূপ বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। এতে তাদের পশুর মত অমানবিক ও কট্টরপন্থী আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পুনরায় ২০ বছর আগের মত অবস্থানে ফিরে যাবে। এ পরিস্থিতি রুখতে বিশ্বের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তালিবানদের দিকে নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২৩২০
আপনার মতামত জানানঃ