
নারী হজযাত্রীদের সেবা দিতে সৌদি আরবের মক্কা-মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের জন্য ৬০০ নারী কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছে।
সৌদি আরবের নারী উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নারী উন্নয়ন বিভাগের উপ প্রধান আল-নাউদ আল-আবৌদ বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব কর্মীদের মধ্যে ৩১০ জন এ মন্ত্রণালয়ের কর্মী। খবর আরব নিউজের।
এছাড়া নারী বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও নির্দেশনা বিভাগের প্রধান নোরা আল-থুয়াইবির দফতরের আরও ২০০ নারী কর্মী মসজিদে হজযাত্রীদের সেবা দিতে প্রশিক্ষণ নেন।
বাকি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা হলেন সৌদির নারী প্রশাসন ও সেবা বিভাগের প্রধান ক্যামিলিয়া আল- দাদির দফতরের নারী কর্মীরা।
এর আগে কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে এবার মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ পদে বেশ কিছু নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। মসজিদ পরিচালনা পর্ষদে উচ্চতর যোগ্যতাসম্পন্ন ২০ সৌদি নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
সৌদি সরকারের তত্ত্বাবধানে মক্কা ও মদিনার দুই সম্মানিত মসজিদের পরিচালনা করে ‘দ্য জেনারেল প্রেসিডেন্সি অব ফর দ্য অ্যাফেয়ার্স অব দ্য টু হলি মসকো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এর উপ-সহকারি পরিচালক, উপসচিব, সহকারি সচিবসহ বিভিন্ন পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত হজেও নারী নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্ব সামলেছিলেন। এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটে। কার্যত নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটে গেছে গতবারের হজে। সৌদি আরবের হজে গতবার নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন নারীরা। এই প্রথম হজে নারীরা এই কাজে সামিল হন।
গত এপ্রিল মাস থেকে হজের নিরাপত্তার জন্য নারীদের এই দল তৈরি করা হয়। সৌদি আরবের সেনার তত্ত্বাবধানে তৈরি দলে বহু নারী যোগ দেন। মোনা তাদেরই মধ্যে একজন। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানান, তার বাবাও সেনা বাহিনীতে ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনিও ঠিক করেন সেনা বাহিনীতে যোগ দেবেন। শেষপর্যন্ত তার স্বপ্ন স্বার্থক হয়েছে।
উপরে খাঁকি জ্যাকেট, নীচে ঢোলা প্যান্ট, মাথায় সেনার টুপি, তার নীচ দিয়ে হিজাব এবং মুখে মাস্ক; নারী নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য এমনই পোশাক তৈরি করা হয়। হজের সময় মক্কা এবং মদিনা দুই জায়গাতেই এই নারী নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ করেছেন। সৌদি সরকার তাদের কাজের প্রশংসাও করেছে।
এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে (পবিত্র কাবা শরীফ) নারী হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগে প্রায় দেড় হাজার নারী নিয়োগ দেয় দুই পবিত্র মসজিদ বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সি।
জানা যায়, এদের মধ্যে কারিগরি ও পরিষেবা বিষয়ক সংস্থায় মোট ৬০০ জন নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকী নারী কর্মীদের অন্যান্য বিভাগ যেমন ইলেকট্রিক যানবাহন, জমজমের পানি ইউনিট, গাইডেন্স ও প্রশাসনিক বিষয়ক, জনসংযোগ, মিডিয়া ও যোগাযোগ এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণ বিভাগে মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে নারী উন্নয়ন বিষয়ক উপ-রাষ্ট্রপতি আল-নাউদ আল-আবৌদ বলেন, এই পদক্ষেপটি সৌদি বাদশাহ সালমানের ভিশন-২০২২ উদ্যোগের একটি অংশ। এর লক্ষ্য হল মক্কা ও মদিনার মসজিদ দুটিতে প্রদত্ত সেবার মান আরো বাড়ানো।
তিনি বলেন, এটি সৌদি নেতৃত্বে নারীদের ক্ষমতায়ন ও যুবরাজ বইন সালমানের ভিশন-২০৩০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্র্যান্ড মসজিদে আগত নারী হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের সর্বোত্তম সম্ভাব্য পরিষেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনারও একটি অংশ।
প্রসঙ্গত, সৌদি রাজপরিবার বেশ কয়েকবছর আগেই দেশের সামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কারের কথা ঘোষণা করেছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে সে কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই সংস্কারের অন্যতম বিষয় ছিল নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া। বহুকাল পর্যন্ত সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ছিল। এখন আর সেই নিষেধাজ্ঞা নেই। হজে নারী নিরাপত্তারক্ষীদের নেয়ার বিষয়টিও ওই সংস্কারের অংশ বলে জানানো হয়েছে।
তবে সৌদি আরবের নারী অধিকার সংগঠনগুলির দাবি, একদিকে সংস্কারের কথা বললেও অন্যদিকে নারী অধিকার কর্মীদের উপর জুলুমও চালানো হচ্ছে সেখানে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৩১
আপনার মতামত জানানঃ