আফগানিস্তান দখলের পর থেকে তালিবানরা ক্ষমা প্রার্থনা করে নানারকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের শাসন প্রক্রিয়া কট্টরপন্থী আফগান নাগরিকরা অতিষ্ট হয়ে আছেন। বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তালিবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক লোকজনদের রাস্তাঘাটে হত্যা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা এবং মুখ খোলার জন্য নারীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
এর বাদেও তালিবানরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে আদেশ দিচ্ছে লোকজনকে। এমনকী তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
কাবুলে, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে জঙ্গি গোষ্ঠীর নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী অনেক নারী বলেছিলেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তাদের জন্য এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কারণ তালিবান প্রতিনিয়ত তাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
মন্ত্রিসভা ঘোষণার মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই তালিবান আফগানিস্তানের জনগণদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ প্রদর্শন শুরু করেছে।
তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা প্রতিশোধমূলক কোনো হামলা করবে না, কিন্তু আফগানিস্তানের শেষ প্রদেশ পাঞ্জশির দখলের সময় পালানোর চেষ্টা করায় বেসামরিক লোকদের গুলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে।
তালিবান পাঞ্জশি দখলের পর ওই দিন গভীর রাতে আফগান নেতা আহমদ মাসউদ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে দেশবাসীকে শক্তিশালী থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন আমাদের দেশের মর্যাদা, অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এর আগে তালিবান মৃত নারীদেরও ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করেন আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা সাবেক আফগান নারী পুলিশ সদস্য। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
ওই নারী পুলিশ সদস্য নিজেকে মুসকান বলে পরিচয় দেন। তার দাবি, তালিবান সদস্যরা ধর্ষণ করার সময় জীবিত বা মৃত কী না তা বাদ বিচার করত না দীর্ঘ ২০ বছর পর তালিবান ফের ক্ষমতা দখল করলে ভয়ে ভারত পালিয়ে আসেন মুসকান।
ভারতের এক সংবাদমাধ্যমকে মুসকান জানান, তালিবান সদস্যরা নারীদের তুলে নিয়ে যেত। তাদের হত্যা করত। এমনকি তালিবান সদস্যদের মৃতদেহ ধর্ষণ করারও নজির আছে বলে দাবি করেছেন মুসকান।
গত ১৫ আগস্ট তালিবানের হাতে কাবুলের পতন হয়। কাবুল থেকে মার্কিন সেনা ও বেসামরিক লোকজন সরিয়ে নেওয়ার সময় গত ২৬ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় আইএস। এই হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ প্রায় ২০০ মানুষ নিহত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানদের এসব হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। বেসামরিক মানুষকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হেনস্তা করা ও হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২০৩
আপনার মতামত জানানঃ