২০২১ সালে এসে ডিজিটালের ধারণার সঙ্গে পরিচয় ঘটেনি এমন মানুষ বোধ হয় আর পাওয়া যাবে না। বিশ্বজুড়েই চলছে ডিজিটাল প্রযুক্তির দোর্দণ্ড প্রতাপ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই দৌড়ে। ২০০৮ সালে সরকার ঘোষণা দেয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দেশকে তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরিত করার। যার ভিত্তিতে নাগরিকদের জীবনমান আধুনিকায়নসহ শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য, উৎপাদন, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রকে ডিজিটালের আওতায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিতে শুরু হয় পথচলা। কিন্তু এই পথচলা সময়ের তুলনায় কতটা এগিয়েছে কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশ হবার প্রকল্পে কতটা উন্নতি করেছে এনিয়ে রয়েছে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ও সার্ফশার্ক সম্প্রতি ‘ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২১’ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সার্ফশার্ক বিশ্বের ১১০টি দেশের মানুষের জনগণের ডিজিটাল ওয়েলবিং বা কল্যাণের মান নিয়ে এ প্রতিবেদন করেছে।
প্রতিবেদন জানিয়েছে, ডিজিটাল জীবনমানে বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৩তম হয়েছে। এবারের স্কোর শূন্য দশমিক ৩৪, যা গতবার ছিল শূন্য দশমিক ৩৫। দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাংলাদেশ সর্বনিম্নে অবস্থান করছে।
ডিজিটাল জীবনযাত্রার মান নির্ধারণে ইন্টারনেট সামর্থ্য, ইন্টারনেটের মান, ই-অবকাঠামো, ই-নিরাপত্তা, ই-সরকার— পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে সার্ফশার্কের প্রতিবেদনটি করা হয়। ডিজিটাল জীবনমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিনল্যান্ড, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। সবশেষে আছে ইথিওপিয়া। আর শেষের দশে বাংলাদেশও আছে।
বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩ নম্বরে। এশিয়ার ৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩০তম। বাংলাদেশের নিচে আছে তাজিকিস্তান ও কম্বোডিয়া। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত শীর্ষে। বৈশ্বিক র্যাংকিং ৫৯ ও স্কোর শূন্য দশমিক ৫২।
সূচকে ইন্টারনেট সামর্থ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ ৮৪তম, ইন্টারনেটের মানে ৮৯, ই-অবকাঠামোতে ৮৯, ই-নিরাপত্তায় ১০৩ ও ই-সরকারে ৮৬তম।
বাংলাদেশকে যেসব মানদণ্ড পেছনে রেখেছে তা হচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেট গতি (১১০তম), নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স (৯৬তম) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচক (৯৬তম)। এ ছাড়া বাংলাদেশের যেখানে এগিয়েছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স্থায়িত্ব (১৬তম), ব্রডব্যান্ড গতি বৃদ্ধি (৪৪তম) ও মোবাইল ইন্টারনেট স্থিতিশীলতা (৫৩তম)।
বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩ নম্বরে। এশিয়ার ৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩০তম। বাংলাদেশের নিচে আছে তাজিকিস্তান ও কম্বোডিয়া। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত শীর্ষে।
সার্ফশার্কের ডিজিটাল জীবনমানের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অবস্থান ছিল ৮৫টি দেশের মধ্যে ৭৮তম।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, যা প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি৷ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণা বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা৷
তার মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের যে অগ্রগতি, তাতে ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ শেষ হবে৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের আইসিটি বিভাগ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ইনফো সরকার-৩ ও স্ট্যাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্প ডিজিটাল বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করছে৷ বাস্তবায়ন করছে আইসিটি বিভাগ৷
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ঠিক যে ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর একটি ওয়েভ তৈরি হয়েছে৷ সবাই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে৷ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, ব্যবহার বাড়ছে৷ সরকারের নানা বিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে৷ কিন্তু অগ্রগতি খুব ভালো, তা বলা যাবে না৷ আর বেসরকারি খাতে যে অগ্রগতি হওয়া উচিৎ ছিল, তা হয়নি৷
তারা বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার এখনো এখানে বেশ ব্যয়সাপেক্ষ এবং গতি কম৷ আর যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাদের বড় অংশ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর জোর দিতে হবে৷ ডেস্কটপে ইন্টারনেট সেবা বাড়াতে হবে৷ আর মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের নানা বিষয় ব্রাউজ করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷
তারা বলেন, অনেক খাতই এখনো ডিজিটাল হয়নি৷ ব্যাংকিং খাতে অর্থ স্থানান্তরসহ নানা বিষয়ে অনলাইন সুবিধা পাওয়া গেলেও অনেক কিছুই এখনো চলে ম্যানুয়ালি৷ ঘরে বসে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না৷ অনেক খাতই আংশিক ডিজিটাল৷ বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা এখনো ডিজিটাল হয়নি, যা খুবই জরুরি৷ পুরো ডিজিটাল করতে হলে সরকারের কিছু আইন ও নীতির পরিবর্তন করতে হবে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০৩
আপনার মতামত জানানঃ