দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার থেকে খুলছে আফগানিস্তানের মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলো। কিন্তু তালিবানের নতুন সরকার শুধুমাত্র ছেলেদের স্কুলে আসার নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় নারীদের স্কুলে আসার কোনো উল্লেখ নেই।
গতকাল শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তালিবান সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের মাধ্যমিক স্তরের সব স্কুলে শিক্ষাক্রম পুনরায় শুরু হবে।
তালিবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই ঘোষণায় জানিয়েছে, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
তবে নারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ফিরতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তালিবান সরকারের এই আদেশে বহু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিবান সরকারের এই ঘোষণার পর আফগানিস্তান হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
এর আগে তালিবান সরকার নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থলে ‘নীতি নৈতিকতা’ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন করেছে। ফলে তারা নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নারীদের আর সেখানে ঢুকতে দেয়নি। যারা কাজে এসেছিলেন ওই সব নারী কর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় তালিবান।
অথচ তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলেছেন, এবারের তালিবান শাসনামল ১৯৯৬-২০০১ সালের সময়ের মতো হবে না। ওই সময় নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, মেয়েদেরকে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিলেও ক্লাসে ছেলে-মেয়েদের আলাদা বসার আদেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আফগানিস্তান অ্যানালিটিস নেটওয়ার্কের সহ-পরিচালক কেট ক্লার্ক বলেন, তালিবান ক্ষমতা দখলের পর নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও তা থেকে সরে আসছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না গোষ্ঠীটি।
এদিকে, আফগানিস্তানে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জায়গায় ‘পাপ-পুণ্য’ মন্ত্রণালয়ের ব্যানার দেখা গেছে। শুক্রবার কাবুলে মন্ত্রণালয়ের ভবনে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিল মুছে দিয়ে নৈতিক পুলিশের সিল প্রতিস্থাপন করেছেন শ্রমিকরা।
এ প্রসঙ্গে বিভাগটির সাবেক নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, তাদের ভবনের বাইরে তালা দেয়া হয়েছে।
প্রকাশিত ছবি এবং রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবনটি দারি এবং আরবি মিশ্রিত চিহ্ন দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। শুক্রবার সেখানে ‘প্রার্থনা ও নির্দেশনা মন্ত্রণালয় এবং পুণ্যের প্রচার এবং অনৈতিকতা প্রতিরোধ’ লেখা দেখা গেছে।
একটি ভিডিওফুটেজে দেখা যায়, ভবনের বাইরে অবস্থানরত নারী কর্মীরা বলছেন, তারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ করতে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রতিবারই তাদের বাড়ি ফিরে যেতে নির্দেশ দিচ্ছে তালিবান।
বৃহস্পতিবার ভবনের গেটগুলো তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। এরমধ্যে আজ (শনিবার) থেকে কাবুলের বয়েজ (ছেলেদের) স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে তালিবান শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ