
গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিলেও ফেসবুক ইঙ্কের আওতাধীন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং সার্ভিস মোটেই গোপনীয় কিছু নয়। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত মেসেজ পড়েন এমনকি শেয়ারও করেন ফেসবুককর্মীরা!
যদিও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার ফিচারের ব্যাপারে জনপ্রিয় এই অ্যাপের প্রচারণায় দাবি করা হয়, মূল মালিকানা কোম্পানি ফেসবুক তাদের ব্যবহারকারীদের মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া মেসেজ পড়তে পারে না।
কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন গণমাধ্যম প্রো-পাবলিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বজুড়ে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পড়তে ও সেগুলো প্রয়োজন অনুসারে সংশোধন করতে এক হাজারের বেশি বেতনভুক্ত কর্মী রেখেছে ফেসবুক। তথাকথিত প্রাইভেট বা ডিজিটাল কোডিংয়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত (ইনক্রিপটেড) মেসেজ পড়ছেন এসব কর্মীরা।
এখানেই শেষ নয়, ফেসবুক ইঙ্ক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের তথ্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা- যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গেও শেয়ার করে।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বারবার দাবি করেছেন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের বার্তা মূল কোম্পানি দেখে না। কিন্তু তারপরই বিস্ফোরক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।
এর আগে, ২০১৮ সালে প্রথম মার্কিন সিনেটে দেওয়া এক শুনানিতে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ বলেছিলেন, ‘আমরা হোয়াটসঅ্যাপের কোনো কন্টেট দেখি না।’
কিন্তু প্রো-পাবলিকার প্রতিবেদন বলছে, ‘মেসেজ মডারেট করাসহ কল আড়ি পাততে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন ও সিঙ্গাপুরে রীতিমতো বহুতল অফিস রয়েছে ফেসবুকের। এসব অফিসের এক হাজার নিয়মিত কর্মী প্রতিনিয়ত কোটি কোটি বার্তা ও কল বিশ্লেষণ করছেন।’
এসব কর্মীর অস্তিত্ব স্বীকার করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব অ্যালগরিদমে সতর্কতার ব্যবস্থা রয়েছে। জালিয়াতি, চাইল্ড পর্ন বা সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এমন ঝুঁকিমূলক বার্তাগুলোকেই চিহ্নিত করে মডারেটরদের জানান ব্যবহারকারীরা। এরপর তারা সেগুলো বিশ্লেষণ করেন।
এ ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপের একজন মুখপাত্র প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের স্প্যাম বা হয়রানিমূলক বার্তা রিপোর্টের সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে তারা চ্যাটের অতি-সাম্প্রতিক মেসেজ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ভয়াবহ রকমের মানসিক নির্যাতন রোধে এই ফিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীর রিপোর্টের ভিত্তিতে নেওয়া এ পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক ইনক্রিপশনের শর্ত ভঙ্গ হয়, এমন দাবি আমরা মানতে নারাজ।’
তবে প্রো-পাবলিকা ব্যাখ্যা করে বলছে, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ দুই বা ততধিক পক্ষের মধ্যে ইনক্রিপশনের মাধ্যমে বিনিময় করা হলেও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল রকমের চ্যাট, ছবি ও ভিডিও স্ক্যান করতে পারে না।
আর এজন্যই হোয়াটসঅ্যাপে নিযুক্ত মডারেটরদের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত কন্টেন্ট পরীক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই প্ল্যাটফর্মটির নিজস্ব নীতির আওতায় কোনো বার্তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বা হয়রানিমূলক বলে কেউ রিপোর্ট করলে, মডারেটরা তা পরীক্ষা করেন।
রিপোর্ট বাটন চাপার সঙ্গে সঙ্গে ওই চ্যাটের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে রিপোর্ট করা বার্তার সঙ্গে সাম্প্রতিক পাঁচটি বার্তাও চলে যায় পরীক্ষার জন্য। এতে সংযুক্ত ভিডিও বা ছবিও তারা পান বলে প্রো-পাবলিকাকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াটসঅ্যাপের সাবেক কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ও মডারেটর।
এছাড়া, ওই ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, প্রোফাইল ছবি, স্ট্যাটাস-সহ ফোন ব্যাটারি লেভেল, কোন ভাষায় ফোনটি চালিত হচ্ছে, সেখানে সংরক্ষিত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টসমূহের তথ্যও জেনে যান তারা।
প্রো-পাবলিকা আরও জানায়, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী মেটাডাটা বা ইনক্রিপশনের আওতামুক্ত তথ্যের রেকর্ডও পায়, যা ব্যবহারকারীর অনলাইন গতিবিধি সম্পর্কে অনেক কিছু জানাতে সক্ষম। এখান থেকে অনেক কিছুই মার্কিন বিচার বিভাগের মতো বিশ্বের অনেক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২২৪৫
আপনার মতামত জানানঃ