শিশুরা করোনাভাইরাসে অপেক্ষাকৃত অনেক কম আক্রান্ত হলেও বলা হচ্ছে শিশুরা করোনাভাইরাসের নীরব শিকার। করোনা ভাইরাস ছাড়াও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্যের মতো সমস্যাগুলোর তীব্রতা অভূতপূর্ব হারে বেড়ে গেছে। এসব বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত। সংক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বের কিছু অংশে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি চললেও পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে বলে সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
‘লস্ট জেনারেশন: এডুকেশন ইন কোয়ার্টার অব কান্ট্রিজ অ্যাট রিস্ক অব কলাপ্স, স্টাডি ওয়ার্নস’ নামক এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। সেভ দ্য চিলড্রেনের শিক্ষাবিষয়ক এক প্রতিবেদনের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি তা জানিয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন। এ তালিকায় কঙ্গো, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তানসহ আটটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ইয়েমেন, বুরকিনা ফাসো, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ আরও ৪০টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ‘উচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে বলেও জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বের কিছু দেশে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি চললেও পৃথিবীর এক–চতুর্থাংশ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, করোনাভাইরাস মহামারিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় দেড় শ কোটি শিশু স্কুলবঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্য এক-তৃতীয়াংশের অনলাইন শিক্ষার সুযোগও নেই।
জাতিসংঘের হিসাবে, করোনাভাইরাস মহামারিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় দেড় শ কোটি শিশু স্কুলবঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশের কাছে ঘরে বসে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগও ছিল না। বর্তমানে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো চরম দারিদ্র্য, কভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তঃসম্প্রদায় সহিংসতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর ফলে সেখানে ‘শিক্ষার্থীদের একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, করোনাভাইরাস মহামারিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় দেড় শ কোটি শিশু স্কুলবঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশের কাছে ঘরে বসে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগও ছিল না। বর্তমানে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো চরম দারিদ্র্য, কভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তঃসম্প্রদায় সহিংসতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর ফলে সেখানে ‘শিক্ষার্থীদের একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী গোয়েন হাইনস বলেন, ‘আমরা জানি, করোনায় স্কুল বন্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র শিশুরা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিশুদের শিক্ষা ও জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে মাত্র একটি হচ্ছে করোনাভাইরাস। আমাদের এ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এখনই কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু বিষয়গুলো আগের মতো করাই এখন যথেষ্ট নয়। এটিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে ‘অগ্রগামী ও ভিন্নভাবে’ সবকিছু গড়ে তুলতে হবে।’
ইউনিসেফের তথ্যমতে, উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ অংশে স্কুলগুলো ফের চালু হলেও বাকি বিশ্বের অন্তত ১৬টি দেশে কঠোর লকডাউনের কারণে ১০ কোটিরও বেশি শিশু ক্লাসের বাইরে থাকছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এক থেকে দেড় কোটি শিশু হয়তো আর কখনোই স্কুলজীবনে ফিরতে পারবে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে মেয়ে শিশুরা।
ইউনিসেফের শিক্ষাবিষয়ক বৈশ্বিক পরিচালক রব জেনকিন্সের মতে, ‘করোনা মহামারির আগেও বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চল শিক্ষাসংকটের মুখে ছিল’। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা শিক্ষার্থীদের একটি প্রজন্ম হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছি। এটি আজীবন প্রভাব ফেলতে পারে যদি না আমরা শিশুদের পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে এমন কর্মসূচির দিকে না যাই। শুধু শিক্ষার জন্যই নয়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি সহায়তা এবং সুরক্ষা অনুভূতির জন্যেও সহায়তা দরকার’।
গেল ২৪ আগস্ট জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, করোনা প্রকোপে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর আগে গত ১২ জুলাই ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল যৌথ বিবৃতিতে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
হেনরিয়েটা ফোর ও অড্রে অ্যাজুল বলেন, ‘আজ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর কারণে ১৫ কোটি ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। বন্ধের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সবার শেষে এবং পুনরায় খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে থাকা উচিত। স্কুলগুলো পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। স্কুল খোলার জন্য করোনা শূন্যের কোঠায় যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যায় না’।
করোনা ভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়লে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ছুটি আর বাড়ছে না। প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসজনিত বন্ধে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার বা শিক্ষণঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার তাগিদ দিচ্ছেন শিক্ষাবিদেরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৭
আপনার মতামত জানানঃ