ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সেই দিন আর না থাকলেও দেশটির রাজপরিবার নিয়ে এখনো বিশ্বজুড়ে কমবেশি আগ্রহ আছে। যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ খুব শিগগির ৯৬ বছর বয়সে পা দেবেন। তাই কালক্রমে তার অনিবার্য বিদায়ের কথা আলোচনায় আসছেই।
সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলে কী ঘটতে পারে? কিভাবে দায়িত্বে আসবেন তার উত্তরাধিকারী? কিভাবেই বা সারা হবে আনুষ্ঠানিকতাগুলো?
এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসবে নানা বিচিত্র তথ্য। তবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রয়াত হলে কিভাবে তার শেষকৃত্য হবে সেই বিষয়ে ব্রিটেনের পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে আমেরিকার সংবাদ সংস্থা ‘পলিটিকো’। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে তারা। সেখানে বলা হয়েছে, ব্রিটেন সরকার এই পুরো পরিকল্পনার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’।
ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হবে আজ শুক্রবার প্রথমবারের মতো সে সম্পর্কিত গোপন পরিকল্পনার নথি ফাঁস হয়েছে। রানীর মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে ১০ দিন পর পর্যন্ত চলবে মহাসমারোহে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের এসব প্রস্তুতি।
অপারেশন লন্ডন ব্রিজ নামের কর্মযজ্ঞের খুঁটিনাটি বিবরণ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘পলিটিকো’র কাছে ফাঁস করেছে একটি অজ্ঞাত সূত্র। ওই সূত্রে জানা যায়, রানীর মৃত্যুর দিনকে ‘ডি ডে’ বলে অবহিত করবেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা।
৯৫ বছরের দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটিশ রাজন্যদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘদিন সিংহাসনে আসীন রয়েছেন। মৃত্যুর ১০ দিন পর তাকে সমাধিস্থ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার আগে পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে সফর সম্পন্ন করবেন তার পুত্র ও সিংহাসনের উত্তরসূরী যুবরাজ চার্লস।
পরিকল্পনা অনুসারে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে জন-সাধারণের সম্মান জানানোর জন্য তিনদিন রাখা হবে রানীর মরদেহবাহী কফিন। তার মৃত্যুর ঘটনা জানাজানির পর লাখো মানুষের ভিড়ে রাজধানী লন্ডনে যানজট ও আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কাও করছেন কর্মকর্তারা। এ পরিস্থিতিতে দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকটও।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে নজিরবিহীন ভিড় ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা অনুমান করে বিশাল নিরাপত্তা প্রস্তুতি যুক্ত হয়েছে পরিকল্পনায়।
সরকারের আরেকটি মেমোতে আশঙ্কা করা হয়, লন্ডনমুখী ভিড়ের কারণে নগরীটির সকল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হতে পারে।
পলিটিকো জানায়, রানীর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা অনুষ্ঠান হবে সেইন্ট পল ক্যাথিড্রালে।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এরমধ্যেই একমত পোষণ করেছেন।
এদিকে ফাঁস হওয়া পরিকল্পনার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি রানীর বাসস্থান বাকিংহাম প্যালেসের কর্মকর্তারা।
এর আগে ২০১৭ সালে অপারেশন লন্ডন ব্রিজ নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম— দ্য গার্ডিয়ান। ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা যাওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যকে আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে অন্তিম বিদায় জানাতে হয়নি।
রানীর মৃত্যুর খবরটা প্রথমে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর পর জানবেন সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা। আর তা করা হবে বিশেষ কোড ওয়ার্ড অর্থাৎ সংকেতের মাধ্যমে। রানীর কোড ‘লন্ডন ব্রিজ’। তিনি মারা গেলে বিশেষ টেলিফোন লাইনে বিষয়টি জানানোর সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা বলবেন, ‘লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’।
রানীর শেষ মুহূর্তটায় তার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অধ্যাপক হিউ টমাসের পাশে থাকার কথা। তিনি তখন রানীর ঘরে কে কে প্রবেশ করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করবেন। ঠিক করবেন সাধারণ মানুষকে কী তথ্য জানানো যেতে পারে, তা-ও।
রানী মারা গেলে তার ব্যক্তিগত সচিব ক্রিস্টোফার গাইটের ওপর প্রধানমন্ত্রীকে খবরটা জানানোর দায়িত্ব পড়বে। লন্ডনে পররাষ্ট্র দপ্তরের গ্লোবাল রেসপন্স সেন্টার থেকে এ খবর যুক্তরাজ্যের বাইরে ১৫টি দেশের সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যুক্তরাজ্যের রানীই এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এ ছাড়া রানীর প্রভাব রয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত এমন ৩৬টি দেশেও খবরটি পাঠানো হবে। এসব দেশের প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূতেরা শোক প্রকাশ করতে বা বাহুতে সোয়া তিন ইঞ্চি প্রশস্ত কালো বন্ধনী পরবেন।
সাধারণ মানুষ খবরটি পাবে সংবাদমাধ্যমকে জানানোর পর। বাকিংহাম প্যালেসের ফটকে কালো নোটিশ টাঙানো হবে। প্রাসাদের ওয়েবসাইটটিও একই রং ধারণ করবে। মৃত্যুসংবাদ প্রচার করবে বিবিসি।
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন ডাকা হবে, সাধারণ মানুষকে কাজ থেকে দ্রুত ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে। আকাশপথে উড়োজাহাজের পাইলটরা যাত্রীদের সংবাদটি জানাবেন।
রানীর মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লস রাজা হবেন। চার্লস ও নতুন রানী ক্যামিলা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড সফর করবেন। এর সবকিছু সেই ১৯৬০-এর দশক থেকেই নির্ধারিত। রানীর প্রয়াণ মাত্র প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৭
আপনার মতামত জানানঃ