যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা দ্রুত নিচের দিকে নামছে। ক্ষমতা গ্রহণের আট মাসের মাথায় বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করল। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন বাইডেনের ওপর আস্থা হারাচ্ছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির সময় ভুলে বাইডেনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, তা মারাত্মকভাবে ধাক্কা খেয়েছে। ফলে ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ দেশটির উদারনৈতিক মহল দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছেছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু তার সেই জনপ্রিয়তা ধাক্কা খেল আফগান নীতির কারণে। এক ধাক্কায় বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমেছে ৪৩ শতাংশ। যা আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলেই দাবি করা হচ্ছে।
মেরিস্ট ন্যাশনাল পল নামে একটি সংস্থা সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালায় আমেরিকানদের মধ্যে। আফগানিস্তান থেকে সেনা তুলে নেওয়ার পর থেকেই বাইডেনের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আমেরিকার সমাজ। বাইডেন ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নাকি এটা করা উচিত হয়নি, এ নিয়েই সমীক্ষা চালিয়েছে মেরিস্ট পল। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই বাইডেনের বিদেশনীতির বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। সমাজের একটা বড় অংশ আবার এটাকে আমেরিকার ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন।
৫৬ শতাংশ আমেরিকান যেমন বাইডেনের বিদেশনীতিকে দায়ী করেছেন, তখন আবার ৬১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা তোলা উচিত হয়নি আমেরিকার। প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষ আবার এই ঘটনাকে ‘আমেরিকার ব্যর্থতা’ বলে মনে করেছেন।
তবে ৬১ শতাংশ মানুষ আবার জানিয়েছেন, তারা মনে করেন আমেরিকার সাহায্য ছাড়াই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়া প্রয়োজন আফগানিস্তানের। তবে ২৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে সামলানো আমেরিকার ‘কর্তব্য’।
আফগানিস্তানে পরিস্থিতি কীভাবে সামলানো উচিত ছিল আমেরিকার? এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩৭ শতাংশ মানুষ সেনা ফিরিয়ে নিয়ে আসাকে সমর্থন করেছেন। ৩৮ শতাংশ বলেছেন, কিছু সেনা আফগানিস্তানে রাখা উচিত ছিল। ১০ শতাংশ বলেছেন, সেনা সরিয়ে নেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। ৫ শতাংশ বলেছেন আফগানিস্তানে আরও সেনা পাঠানো উচিত।
বাইডেনের বিদেশনীতির বিরুদ্ধে মত দিলেও আমেরিকানরা এর জন্য সম্পূর্ণভাবে তাকে দায়ী করেননি। এর জন্য আমেরিকানদের একটা বড় অংশই (৩৬%) জর্জ বুশের সেনা অভিযানের ‘ব্যর্থ’ নীতিকেই দায়ী করেছেন। ২১ শতাংশ দায়ী করেছেন জো বাইডেনকে, ১৫ শতাংশ বারাক ওবামাকে এবং ১২ শতাংশ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছেছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু তার সেই জনপ্রিয়তা ধাক্কা খেল আফগান নীতির কারণে। এক ধাক্কায় বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমেছে ৪৩ শতাংশ। যা আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলেই দাবি করা হচ্ছে।
২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসানের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধবিরোধী মার্কিনিদের বাহবা পেয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চরম অব্যবস্থাপনার দৃশ্য সামনে আসে। এ নিয়ে বাইডেনের দলেই তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আফগান বোঝা’ সরছে না বলে এখন মনে করছে আমেরিকার লোকজন। যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে জঙ্গি মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে মার্কিন জনগণের মনে এক অজানা আতঙ্ক ভর করেছে।
শুধু আফগান পরিস্থিতিই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার দায়ও এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাঁধে এসে পড়তে শুরু করেছে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে করোনা মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন বলে অধিকাংশ আমেরিকান রায় দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে বাইডেন মহামারি মোকাবিলাকেই তার প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসের আগেই ৭০ শতাংশ লোকজনকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু তার এ লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।
উল্টো যুক্তরাষ্ট্রে এখন নতুন করে করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছেন। স্বাস্থ্যসেবীদের আশঙ্কা, বছর শেষ হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ফলে মহামারি মোকাবিলা নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা হচ্ছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর মানবিক অভিবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও গত আট মাসে কার্যকর কিছু হয়নি। উপরন্তু দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর প্রবাহ বেড়েছে। আর এখন আফগানিস্তান থেকে বিশেষ ভিসায় অনেক লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।
অপর দিকে ট্রাম্পের আমলের কঠিন অভিবাসন নিয়ম সহজ করায় রক্ষণশীলরা বাইডেনের প্রচণ্ড বিরোধিতায় নেমেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত খুলে দিয়েছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধী ও নথিপত্রহীন লোকজন ঢুকছে। এতে আমেরিকার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
আমেরিকার কর্মজীবীদের জন্য দেওয়া বর্ধিত বেকার ভাতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এরপর কয়েক লাখ মানুষের বেকার ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ভাড়াটেদের উচ্ছেদের ওপর বর্তমান প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেননি। এমন অবস্থায় ভাড়া দিতে না পারা লোকজনকে কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলা করতে হবে। ফলে অনেকের গৃহহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বহুমুখী সমস্যার চাপে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য সময়টা বড্ড খারাপ হয়ে উঠেছে। সার্বিক বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কিছু একটা করতে না পারলে আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৮
আপনার মতামত জানানঃ