চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় করোনাভাইরাসের সিনোফার্মের বেশ কিছু ডোজ টিকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চুরি করে বাইরে বিক্রির অভিযোগে এক ইপিআই পোর্টারকে (ভ্যাকসিন বাহক) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২৯ আগস্ট) বিকেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির এক দাপ্তরিক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই পোর্টার (ভ্যাকসিন বাহক) জাকির গত ১৯ আগস্ট মতলব উত্তর উপজেলার মরাদোন গ্রামে ও ২২ আগস্ট ঠাকুরচর গ্রামে টাকার বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিনোফার্মার করোনা টিকা বিক্রি করেন।
২২ আগস্ট সিভিল সার্জন সাখাওয়াত উল্লাহর নির্দেশে এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মাইনুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক খলিলুর রহমানকে সদস্য করা হয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই ভ্যাকসিন পোর্টারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে জাকির হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির এক কর্মচারী বলেন, কয়েক দিন ধরে জাকির হাসপাতালে আসেন না।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি জানতে পারলে গত ২২ আগস্ট চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহর নির্দেশে এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাইনুল ইসলাম মোনাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত বলেন, ইপিআই পোর্টার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও ডিজি বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে যদি জাকির হোসেনের সঙ্গে আর কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ঢাকার উত্তরায় অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করার পর মামলা দায়ের করেছিলো পুলিশ। দক্ষিণখান এলাকায় ‘দরিদ্র পরিবার সেবা’ নামে একটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে বিজয়কৃষ্ণ তালুকদার নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
ওই ক্লিনিক এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বাসায় অভিযান চালিয়ে মডার্না টিকার ২০টি খালি বাক্স ও ২টি টিকার অ্যাম্পুল উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসিন আরাফাত এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
টিকার একেকটি বক্সে সাধারণ টিকার ১০টি অ্যাম্পুল থাকে। সে হিসেবে উদ্ধারকৃত বাক্সে অন্তত ২০০ অ্যাম্পুল ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আটক ব্যক্তি পুলিশের কাছে নিজেকে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক গণটিকা কর্মসূচির আওতায় তিনি উত্তরার একটি টিকা কেন্দ্রে টিকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে টিকা নিয়ে কারসাজির সাথে যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি প্রয়োগ না করলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকবে যা যথেষ্ট কুফল বয়ে আনবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২০৯
আপনার মতামত জানানঃ