আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে কাবুল বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেটের শাখা সংগঠন আইএস-খোরাসান আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। এ হামলার প্রতিশোধ নিতে ড্রোন হামলা ও রকেট হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। আফগানিস্তানজুড়ে ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বিশ্বের কাছে সাহায্য চাইলেন আফগান সংবাদকর্মীরা। গত শনিবার এক খোলা চিঠিতে এ আহ্বান জানান সংবাদকর্মীরা। আজ সোমবার দেশটির গণমাধ্যম টোলো নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
‘আমাদের রক্ষা করুন’— টানা হুঁশিয়ারি, কন্ঠরোধের চেষ্টা ও ভয় দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক এই ভাষাতেই খোলা চিঠি লিখলেন আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমের সদস্যরা। দেড়শো জন সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক, ও ক্যামেরাম্যানের তাদের বার্তা একসঙ্গে নথিবদ্ধ করে খোলা চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘ, মানবাধিকার কমিশন ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন-সত্ত্বা ও স্বার্থ রক্ষার্থে গঠিত বিভিন্ন সংস্থার উদ্দেশে।
জানা গেছে, চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ১৫০ জন আফগান সংবাদকর্মী। তারা লিখেছেন, “সংবাদমাধ্যমের উপর বাড়তে থাকা আঘাতের কারণে আমরা আতঙ্কিত। আমাদের পরিবার এবং সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের কাছে আর্জি আমাদের বাঁচান। আমাদের পরিবারকে রক্ষা করুন।”
তাদের আর্তি, “গত দু’দশক ধরে যারা আফগানিস্তানের গণতন্ত্র রক্ষার্থে কাজ করল তাদের আপনারা সাহায্য করুন।” তাদের উপর তালিবান জঙ্গিদের অত্যাচার রুখতে যাতে গোটা বিশ্ব সংঘবদ্ধ হয়, সেই আর্জিও জানালেন সংবাদকর্মীরা।
প্রখ্যাত আফগান সাংবাদিক আহমেদ নাভিদ খায়োস বলেছেন, ‘গোটা পরিস্থিতির দিকে শুধু তাকিয়ে না থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক বিশ্ব, এটুকুই প্রার্থনা।’
অপর এক পরিচিত আফগান সংবাদমাধ্যমের মুখ রাফিউল্লা নিখজাদ বলেছেন, ‘এক ভয়ের আবহে ঘেরা বর্তমান ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই।’
যে সাংবাদিকরা এই চিঠি লিখেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকজন মহিলা সাংবাদিকও, যাদের হয় চাকরি ছেঁটে ছাঁটাই হতে হয়েছে, বা তালিবানি ফতোয়ার কোপে বন্ধই করে দিতে হয়েছে তারা যে সংবাদসংস্থার কাজ করতেন সেগুলো।
“সংবাদমাধ্যমের উপর বাড়তে থাকা আঘাতের কারণে আমরা আতঙ্কিত। আমাদের পরিবার এবং সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের কাছে আর্জি আমাদের বাঁচান। আমাদের পরিবারকে রক্ষা করুন।”
১৫ অগাস্ট কাবুলের দখল নেয় তালিবান। বর্তমানে আফগানিস্তানে সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছে জিহাদিরা। ক্ষমতা দখলের পর মুখে স্বাধীনতার কথা বলেও, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের উপর প্রথাগত অত্যাচার শুরু করে তালিবানরা। কাবুল এবং জালালাবাদে টোলো নিউজের সংবাদকর্মীদের মারধর করা হয়। এছাড়া সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালায় তালিবান।
আফগানিস্তান দখলের পর প্রথমে মুখে মহিলাদের সমানাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার বার্তা দিলেও তালিবানরা কাজে করছে একেবারে উল্টোটা। আফগানিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের মহিলা অ্যাঙ্করদের ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে তালিবান ফতোয়ার মাধ্যমে। এমনিতেই কান্দাহারে রেডিও এবং টিভিতে বিনোদনমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান নিষিদ্ধ। মহিলা কন্ঠস্বর নিষিদ্ধ। এরপর তালিবানরা আরও নৈরাজ্য সৃষ্টি করল কাবুলিওয়ালার দেশে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সোজা ঢুকে পড়ে স্টুডিওতে। তারপর অ্যাঙ্করকে গান পয়েন্টে রেখে পড়ানো হল সংবাদ। তালিবানরা যা বলছে, ঠিক তাই আউড়াতে হল উপস্থাপককে। এই পরিস্থিতির মাঝে পড়েই গোটা বিশ্বের কাছে সাহায্যের আর্তি আফগান সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের।
আফগান ছাড়তে চায় দুই হাজার সাংবাদিক
তালিবান আফগানিস্তান দখলের পর থেকেই অস্থির অবস্থার মধ্যে বাস করছেন সেখানকার সাংবাদিকরা। তালিবানের ভয়ে এবার দুই হাজার সাংবাদিক দেশটি ত্যাগের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইএফজে)।
সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় এ সংগঠনটি বলছে, তালিবান কাবুল দখলের পর থেকেই নিরাপদ জীবনের জন্য দেশত্যাগের পথ বেছে নিচ্ছেন সাংবাদিকরা।
আইএফজের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জেরেমি ডিয়ার বলছেন, তারা আফগানিস্তানে কর্মরত সাংবাদিকদের আবেদন হাতে পেয়েছেন। এসব সাংবাদিক আফগানিস্তানে থাকতে চান না।
তিনি বলেন, আইএফজে ইউরোপের স্পেন, উত্তর মেসিডোনিয়া, ফ্রান্স, মেক্সিকো, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় যাওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহায়তা করছে।
তবে আইএফজের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, কোনো দেশ ১০-১৫ জনের বেশি সাংবাদিক গ্রহণ করতে রাজি নয়। প্রতিদিন সাংবাদিকরা আবেদন করছেন। দিন দিন আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তালিবান সাংবাদিদের বিদেশে যেতে অনুমতি দিচ্ছে না।
আপনার মতামত জানানঃ