করোনা শুরু হবার পর থেকে সবচেয়ে বেশি কোভিড ঝুঁকিতে থাকা পেশাটাই চিকিৎসকের। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পিপিই, এন ৯৫ মাস্ক এসবের অভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের করোনা মোকাবিলার যুদ্ধটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছিলো শুরু থেকেই।
দেশে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত মোট ১৮৬ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। আর করোনাতে এখন পর্যন্ত দেশের ৯ হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। শনিবার বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএমএ সভাপতি জানায়, তাদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন ২৫ জন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন ৮২ জন, স্বায়ত্তশাসিতপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সাত জন, বেসরকারি বা জেনারেল প্রাকটিস করতেন ৭১ জন, আর আর্মি মেডিকেল কোরে কর্মরত ছিলেন একজন চিকিৎসক। বিএমএ জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৯ হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্য সেবা কর্মীর মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন ৩ হাজার ১০৮ জন, নার্স ২ হাজার ২৭১ জন আর অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা কর্মী রয়েছেন ৪ হাজার ১৫ জন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ১৫ এপ্রিল মারা যান সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ। তিনিই দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী প্রথম চিকিৎসক। এরপর থেকে একে একে করোনা এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশের আরও ১৮৫ জন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন।
৬ই এপ্রিল ডাক্তার মইনউদ্দিনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কথা জানানো হয়। এরপরদিন সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তবে তার পরদিনই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুপারিশ করা হয়। ৯ই এপ্রিল তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৫ই এপ্রিল সকালে মারা যান তিনি।
করোনা মহামারির শুরু থেকে পিপিই এবং অরিজিনাল মাস্ক সল্পতা চিকিৎসকদের কাজটাকে বন্ধুর করেছে। এর সাথে ঘটেছে তথ্য বিভ্রান্তির মত ঘটনাও।
গত বছরের ২৩ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এইমুহূর্তে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পিপিই প্রয়োজন নেই। সেসময় তিনি কয়েক লাখ পিপিই মজুদ থাকার কথাও জানান তিনি। তিনি এমন সময়ে এ মন্তব্যটি করেন যখন, চিকিৎসকরা পিপিইর জন্য তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে আসছিলেন।
এর দুইদিন পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোন মানুষের করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের প্রথমে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে, এরপর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পিপিই আছে এমন কোনও চিকিৎসকের কাছে তাকে পাঠাতে হবে। যদিও অতিরিক্ত সমালোচনার মুখে বক্তব্যের একদিন পরই সিদ্ধান্তটি পাল্টানো হয়।
এরপর ১৮ এপ্রিল, বাংলাদেশ চিকিৎসক ফাউন্ডেশনের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডা. নিরুপণ দাস গণমাধ্যমে বলেন, “চিকিৎসকদের এ মুহূর্তে বিশেষ গুণগতমানের পিপিই প্রয়োজন, সাধারণগুলো নয়।”
এদিকে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের একটি জরিপে উঠে এসেছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত প্রায় ২৫% চিকিৎসক, নার্স রয়েছেন এবং প্রায় ৬০% কর্মচারী রয়েছেন যারা এখনও পিপিই পাননি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিকিৎদের সুরক্ষা নিয়ে গাফিলতি না করা হলে চিকিৎসকদের মৃত্যুর সংখ্যাটা ছোট হতো। সরকারি তথ্যে গড়মিল ও স্বাস্থমন্ত্রীর কথা অপ্রাসঙ্গিক হবার কারণ হলো সরকারের জবাবদিহিতা নেই। এই প্রথা চালু থাকলে এমন তথ্য বিভ্রান্তি ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮৪৪
আপনার মতামত জানানঃ