আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গতকাল রবিবার (২৯ আগস্ট) মার্কিন সামরিক বাহিনীর ড্রোন হামলায় একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। নিহতদের একজন স্বজন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হচ্ছেন জামারা (৪০), নাসির (৩০), জমির (২০), ফয়সাল (১০), ফারজাদ (৯), আরমিন (৪), বেনিয়ামিন (৩), আয়াত (২) এবং সুমাইয়া (২)।
রোববার মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানায়, আত্মরক্ষার স্বার্থে কাবুলে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টিকারী একজন আত্মঘাতী হামলাকারীকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
মার্কিন বাহিনীর দাবি, এদিন আইএস সদস্য বহনকারী একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ওই ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। তবে হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির বিষয়টি তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)।
এদিকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত একজনের ভাইয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে ২ বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশু রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নিহতরা সবাই খুব সাধারণ পরিবারের সদস্য।
তিনি আরও বলছেন, আমরা আইএস বা দায়েশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই এবং ওই বাড়িতে আমার ভাইয়েরা তাদের পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করতো। এদিকে প্রতিবেশী ও হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা সিএনএন’কে জানিয়েছেন, কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় কয়েকজন নিহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
এক প্রতিবেশী সিএনএনকে জানান, ‘হামলার পর ওই বাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং প্রতিবেশীরাসহ আশপাশে থাকা মানুষ আগুন নেভাতে সেখানে পানি নিয়ে যান। হামলায় নিহত পাঁচ থেকে ছয়জনের মৃতদেহ অমি সেখানে দেখেছি। নিহতদের মধ্যে ওই পরিবারের পিতা, একজন অল্পবয়সী বালক ও দু’জন শিশুও ছিল। হামলায় তাদের মৃতদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া সেখানে দু’জন মানুষ আহত হয়েছেন।
অবশ্য রোববার রাতে নিজেদের ভুল স্বীকার করে মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায় যে, তাদের হামলায় বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপরাধ মানুষের হতাহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে ব্যথিত বলেও দাবি করেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান।
সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র বিল আরবান অবশ্য দাবি করেছেন, ‘বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িতে হামলা চালানোর ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। টার্গেটকৃত গাড়ির ভেতর প্রচুর বিস্ফোরক থাকায় হামলার পর বিশাল বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই এই প্রাণহানি ঘটেছে।’
আহাদ নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি নিহত পরিবারটির প্রতিবেশী ছিলেন। তারা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন। আগুন নেভানোর জন্য নিয়ে এসেছিলেন পানি। সেখানে তিনি দেখেন ৫-৬ জন মানুষ মৃত পড়ে আছেন। যাদের মধ্যে বাবা, তার দুই সন্তান ও আরেকজন ছেলে ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি দেশটিকে চিরস্থায়ী সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা তারই নিদর্শন বহন করছে। আইএস-কে বা অন্যান্য গোষ্ঠীর সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আফগানিস্তান। এদিকে তালিবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতা গোটা পরিস্থিতিকেই আফগান সরকার পরিবর্তনের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেক পর্যবেক্ষকই।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ