কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো জাতীয় গাইডলাইন যথাযথভাবে মানছে না। এই গাইডলাইন প্রণীত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে। নির্দেশনা উপেক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে থাকা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে উঠছে। এ কারণে ভবিষ্যতে কার্যকর ওষুধ দিয়েও এসব জীবাণু মারা সম্ভব হবে না। চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে করোনা চিকিৎসায় বিপর্যয় নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ২২তম সভায় সদস্যরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জারীকৃত জাতীয় কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত হবে না।’ জাতীয় গাইডলাইনে এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জ্বর বা কোভিড রোগের জন্য নয়, যদি অন্য কোনো ‘সন্দেহজনক ব্যাকটেরিয়াজাত সংক্রমণ’ ধরা পড়ে, কেবল সেক্ষেত্রে সুর্নিদিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গাইডলাইনে মোট ছয়বার অ্যান্টিবায়োটিকের আলাপ এসেছে। এর মধ্যে চারবারই অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়াজাত সংক্রমণ না থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে বারণ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও শুরু থেকেই বেশ জোর দিয়ে কোভিড চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিরোধিতা করছে। ১ জুন ২০২০, সোমবার জেনেভায় সদর দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে করোনার চিকিৎসায় যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগের বিষয়ে সতর্ক করে দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাস। তিনি উদ্বেগের সঙ্গে জানান, করোনার মোকাবিলায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যেই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তার আশঙ্কা, অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল প্রয়োগ বাড়িয়ে দিতে পারে মৃত্যুর হারও!
কিন্তু বাংলাদেশে বৈশ্বিক বা জাতীয়, কোনো সতর্কতাই ঠিকঠাক অনুসৃত হচ্ছে না। এ নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারের কাছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন গাইডলাইন মেনে চলে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত কমিটির সভা থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে সভায় অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিষয়টি ছাড়াও বিমানবন্দরে কোভিড মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। সভায় বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে দেশে আসার পূর্ববর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসার বিধান রয়েছে। কিন্তু অনেক যাত্রী টেস্ট ও রিপোর্ট ছাড়া আসছেন। তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে যাত্রীপ্রতি ১৪ হাজার টাকা সরকারের খরচ হচ্ছে। যাত্রীদের জন্যও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন কষ্টকর হচ্ছে।
সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী বিভাগ এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে সব এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে যাত্রার পূর্ববর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটি-পিসিআর দ্বারা কোভিড ১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা প্রয়োজন। এ নিয়ম কঠোরভাবে পালন করতে হবে। এয়ারপোর্ট (বিশেষত ঢাকা), সি-পোর্ট ও ল্যান্ডপোর্টসমূহে রিপোর্ট চেক করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভুয়া রিপোর্ট সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
কোনো কারণে রিপোর্ট ছাড়া যাত্রী এলে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এটা যাত্রীর নিজ খরচে করা যেতে পারে। এক-দুইদিনের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় টেস্ট করে নেগেটিভ রিপোর্ট হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন থেকে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। তবে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। রিপোর্ট পজিটিভ হলে তাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখতে হবে। ইতোমধ্যে যারা কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।
মিই/আরা/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ