২০ বছর পর কট্টর ইসলামী দল তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় নানা আতঙ্ক নিয়ে দেশ ছাড়তে মরিয়া দেশটির হাজার নাগরিক। মানুষের ভিড়ে কাবুল বিমানবন্দর এখন বিশৃঙ্খল। সেখানে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি। এরই মধ্যে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ধাক্কায় বিমানবন্দরে আতঙ্কের বাতাবরণ। এদিকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভিড় জমছে পাক-আফগান স্পিন বলডাক সীমান্তে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার পাক সেনাদের গুলিতে তিনজন আফগান শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
তালিবান সূত্রের বরাতে শুক্রবার রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক নিউজ জানায়, একদল আফগান অবৈধভাবে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের তোখাম চেক পয়েন্টের কাছে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে এই গুলি চালানো হয়।
সূত্র মতে, চেক পয়েন্টের কাছে একটি পথ দিয়ে ১০ আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার পর পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছোঁড়ে। নিহতদের মরদেহ এখনও চেক পয়েন্টের কাছে পড়ে আছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
পাক সংবাদিক নাতিক মালিকজাদা একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রবল গরমকে অগ্রাহ্য করে কীভাবে ভিড় হয়েছে স্পিন বলডাক সীমান্তে।
ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, এটা কাবুল বিমানবন্দরের দৃশ্য নয়। এটা স্পিন বলডাক সীমান্ত। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে চেয়ে এখানে ভিড় জমিয়েছেন আফগান নাগরিকরা। এখানে পরিস্থিতি কাবুল বিমানবন্দরের চেয়েও খারাপ। কিন্তু যেহেতু এখানে কোনও বিদেশি সেনা উপস্থিত নেই, তাই সংবাদমাধ্যমের নজর এদিকে পড়েনি।
চেক পয়েন্টের কাছে একটি পথ দিয়ে ১০ আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার পর পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছোঁড়ে। নিহতদের মরদেহ এখনও চেক পয়েন্টের কাছে পড়ে আছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে। কার্যত, ভিড়ের যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় পদপিষ্ট যে কারও মারা যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান নতুন করে দখল করে তালিবান। এরপর থেকেই অভিযোগ উঠেছে, পাকিস্তান লাগাতার সাহায্য করে চলেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে। কেবল অস্ত্রশস্ত্রই নয়, সেই সঙ্গে অন্যান্য সাহায্যও করছে ইসলামাবাদ।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালিবান কাবুল দখল করার সমর্থন দানকারী দেশগুলোর তালিকায় শুরুতেই ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির কয়েকজন মন্ত্রী বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছেন, তালিবানরা খারাপ মানুষ না এবং ইসলামের আলোকে তারা আফগানিস্তান শাসন করতে চায়।
কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে একটি মাদ্রাসায় তালিবানের কয়েকটি পতাকা উত্তোলন করা হয়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তালিবানের প্রশংসা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা তালিবানের আফগানিস্তান দখলে সহযোগিতা করেছে।
সম্প্রতি তালিবান মুখপাত্র দাবি করেছে, পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় বাড়ি। এবার পাক সীমান্তে দেখা গেল সাধারণ আফগানদের ভিড়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো আফগান শরণার্থীদের গ্রহণ করলেও বিশ্বের ধনী মুসলিম দেশগুলো এই কাজে এগিয়ে আসেনি। একমাত্র ইরান ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলো তাদের গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছে।
পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পাকিস্তানের মতো সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তালিবানের প্রথম শাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন ওআইসির নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু আফগান শরণার্থীদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করার বিষয়ে তেল সমৃদ্ধ দেশটি এখনও নীরব।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও একই অবস্থান নিয়েছে। দেশটি শুধু ভ্রমণ করিডোর হিসেবে পাঁচ হাজার আফগানকে সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাও যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে। মাত্র ১০ দিন আমিরাতে থাকতে পারবেন তারা।
বাহরাইনও বলেছে, আফগান শরণার্থীরা দেশটিতে ট্রানজিট সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এদিকে তুরস্ক জানিয়েছে, তারা আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে প্রস্তুত না। পুনরায় তুর্কি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের কাছে আফগান শরণার্থীরা মুসলিম ভাই নয়, বরং এড়িয়ে যাওয়ার মতো বোঝা। এমনকি আফগান শরণার্থীদের ঢেউ থামাতে ইরান সীমান্তে দেয়াল তুলছে তার প্রশাসন। আফগানিস্তান থেকে যাতে অবাধে শরণার্থী প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আকাশ থেকেও নজরদারির ব্যবস্থা করেছে তুরস্ক সরকার৷
মধ্য এশিয়ার তিনটি দেশ তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আগ্রহী না। তিনটি দেশেরই আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। জুলাই মাসে তাজিকিস্তান জানিয়েছিল, তারা ১ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে। কিন্তু একই সঙ্গে আফগান-তাজিক সীমান্তে সেনাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
আলবেনিয়া ও উগান্ডার মতো ওআইসি’র কয়েকটি সদস্য দেশ আফগান শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের পরই। আলবেনিয়া ৩০০ এবং উগান্ডা ২ হাজার আফগান শরণার্থীর দায়িত্ব নিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২১
আপনার মতামত জানানঃ