গত ১৫ আগস্ট তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার আফগান আমেরিকা ব্রিটেনে পারি জমায়, যাদের অধিকাংশি ছিল আগ্রাসী বিদেশি বাহিনীর হয়ে কাজ করা লোকজন।
তালিবানরা যদিও সবার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছিল, তবুও এই আফগানরা ইউরোপ-আমেরিকার চকচক রঙিন প্রলেপ দেখে সেসব দেশে শরণার্থী হয়ে পাড়ি জমায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন দুর্ভোগের নীচে চাপা পড়তে সময় নেয়নি, অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে পশ্চিমা দেশগুলোতে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে আটকেপড়া বহু আফগান শরণার্থী দেশে ফিরে আসার আকুতি জানিয়েছেন। সূত্র মতে, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্রিটিশ সরকারের ব্যর্থতার পর হতাশ হয়ে তারা এখন দেশে ফিরতে চান। খবর দ্যা গার্ডিয়ানের।
প্রসঙ্গে, তালেবান গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এসব আফগান নাগরিক দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেন। তাদের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘অপারেশন ওয়ার্ম ওয়েলকাম’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেন।
কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল— আফগান নাগরিকদের জীবন পুনর্গঠন, কাজ পাওয়া, শিক্ষা সুবিধা দেওয়া এবং ব্রিটিশ সমাজে একীভূত করে নেওয়া। কিন্তু এসব আফগান নাগরিককে বসতবাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়নি। সাত হাজার আফগান নাগরিককে হোটেলে থাকতে হচ্ছে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও কয়েক মাস তাদের হোটেলে থাকতে হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার যিনি ব্রিটেনে আফগান নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত, তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন আফগান নাগরিক আমাকে বলেছেন— তারা এখন দেশে ফিরে যেতে চান।
ব্রিটিশ ওই ডাক্তার বলেন, ৬৭ বছর বয়স্ক এক আফগান নাগরিক আমাকে বলেছেন- তিনি আর এই অবস্থা মোটেই সহ্য করতে পারছেন না। তিনি হোটেলের বাইরে যেতে চান।
হোটেলে থাকতে বাধ্য হওয়া আফগান নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। একজন কাউন্সেলিং লিডার পরিস্থিতিকে ব্রিটিশ সরকারের মারাত্মক ব্যর্থ কর্মসূচি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আগস্টের শেষের দিকে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর ন্যাটো বাহিনীকে সাহায্যকারী হাজার হাজার আফগান কর্মকর্তা ও সামরিক সদস্য শরণার্থী হিসেবে কাবুল থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেন।
বেশ কয়েকজন আফগান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন যে, তাদেরকে ১০ দিনেরও দীর্ঘ সময় ধরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে এবং বন্দীদের মতো আচরণ করা হচ্ছে। মানবাধিকার এবং সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন কেউ কেউ বলেছিলেন যে, সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পের অংশ হিসাবে তাদের যে আবাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, সে সম্পর্কে তারা কোনও খবর পাচ্ছেন না।
আফগানিস্তানে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের প্রাক্তন পরিচালক হাসিব নূর আলম লন্ডনের ওয়াটারলুর কাছে পার্ক প্লাজা হোটেলে ২০ দিন ধরে আটকে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বন্দি, কিন্তু এমনকি বন্দীদেরও দিনে এক বা দুই ঘণ্টা বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। ২৪ ঘন্টার মধ্যে, আমরা মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য বাইরে যেতে পারি। এই হোটেলের ভিতরেও প্রচুর শিশু রয়েছে। মানুষ হতাশ হয়ে কাঁদছে।’
আফগানিস্তান থেকে আগত আরেক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, তিনি ২০ দিন ধরে হোটেলে আটকে আছেন। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এরপর কি ঘটছে তা জবাব দেয়ার কেউ নেই। আমি স্বরাষ্ট্র কার্যালয়ের কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি ফোন নম্বর চেয়েছি কিন্তু তারা আমাকে তা দেইনি। আমরা তাজা বাতাসের জন্য জানালাও খুলতে পারি না। অনেক শিশু আছে, যারা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না, তারা কোন অভিযোগ করতে পারে না। তাদের কথা শোনার কেউ নেই।
এর আগে আমেরিকাস্থ আফগান শরণার্থীদের অপ্রতুল খাদ্য সরবরাহ এবং তাদের কষ্টকর জীবনের নানান দিক প্রকাশিত হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অথছ যে আফগান জনগণকে কষ্টকর জীবন থেকে ‘রেহাই’ দিতে হলুদ মিডিয়া তালিবানের নামে সত্যমিথ্যা প্রচার করতে থাকে, আর বিশ্ব সম্প্রদায়কে আফগান জনগণের অধিকার রক্ষার দোহাই দিতে থাকে, সেই আফগানরাই যখন আমেরিকা আর যুক্তরাজ্যে ভোগান্তি পোহাচ্ছে, মিডিয়া তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১৪
আপনার মতামত জানানঃ