ইরাক এবং সিরিয়ায় ভয়াবহ সংকটে দিন কাটাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। সিরিয়া ও ইরাকে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ পানি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি মানবিক সহায়তা বিষয়ক ১৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, কম বৃষ্টিপাত ও খরার কারণে সিরিয়া ও ইরাকের অনেক মানুষ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি জমির জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না তারা। সব মিলিয়ে গত ৭০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ খরা পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে সিরিয়া। ফলে তীব্র পানি সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃ্দ্ধির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং খরার প্রবণতা বাড়ছে।
এছাড়া সিরিয়া ও ইরাকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিদ্যুৎ সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাঁধের পানি ফুরিয়ে আসায় এসব অঞ্চলে কমে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত কাজে প্রভাব ফেলছে সমস্যাগুলো।
নরওয়ের শরণার্থী বিষয়ক কাউন্সিলের পরিচালক কার্টসেন হ্যানসেন বলেন, লাখ লাখ সিরিয়ান এবং ইরাকি নাগরিকের জন্য পানি ও খাদ্য উৎপাদন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে পড়াটা অনেকটাই অনিবার্য।
এদিকে সোমবার (২৩ আগস্ট) বিশ্ব পানি সপ্তাহ-২০২১ শুরু হয়েছে। এবারের সম্মেলনে জলবায়ুর বৈশ্বিক প্রভাব, গোটা বিশ্বে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দূষিত পানি থেকে রোগ ছড়ানো, জীবন ও ফসল বাঁচাতে পানি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের ভাবনা থাকছে আলোচনার শীর্ষে।
এ সম্মেলন চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। জলবায়ু সংকট নিরসন, দারিদ্র্য হ্রাস ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণই এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ভার্চুয়াল এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ১৭০টি দেশের এক হাজারের বেশি প্রতিনিধি।
তীব্র খরায় সিরিয়া-ইরাকে জলবায়ু পরিবর্তনে মধ্য প্রাচ্যের একাধিক দেশে আবহাওয়ার চরম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমন শঙ্কার কথা শুনিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা জানিয়েছেন, ইরাক এবং সিরিয়ায় নেমে আসতে চলেছে তীব্র খরা। ভয়ঙ্কর হবে সেই খরা পরিস্থিতি। ১২ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। তীব্র খাদ্য সংকট তৈরি হবে সেসব জায়গায়। অনাবৃষ্টির কারণে তীব্র জল সংকট দেখা দেবে। তার জেরেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে। জল সংকট দেখা দেওয়ায় একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও কাজ করবে না। যার জেরে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেবে। তার প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও। একাধিক চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে বিদ্যুতের অভাবে। এমনই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে পড়তে চলেছে ইরাক-সিরিয়া।
পরিববেশবিদরা জানিয়েছেন, সিরিয়ার প্রায় ৪০০ স্কোয়ার কিলোমিটার কৃষি জমি তীব্র জলসংকটে পড়েছে। উত্তর সিরিয়ার দুটি ড্যামে জল প্রায় শুকিয়ে এসেছে। সেঁচের জন্য জল পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে ফসল লাগালেও জলের অভাবে সেই ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সিরিয়ার মতই ইরাকেও জলস্তর নামতে শুরু করেছে। ইরাকে কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই জলসংকটের কারণে ইরাকে গমের উৎপাদন ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। গত ৪০ বছরে এমন অনাবৃষ্টি দেখেনি ইরাক। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে।
গত ৭০ বছরে এমন খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি সিরিয়ায়। যদি দ্রুত এর মোকাবিলায় কোনও পদক্ষেপ করা না হয় তাহলে আরও ভয়ঙ্কর হবে পরিস্থিতি। এবার অনাহারে মরতে হবে ইরাক সিরিয়া ও ইরানের বহু লোককে। গোটা বিশ্বের একাধিক বিজ্ঞানী আগেই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘকে। অবিলম্বে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ না করলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ৭০ বছরে এমন খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি সিরিয়ায়। যদি দ্রুত এর মোকাবিলায় কোনও পদক্ষেপ করা না হয় তাহলে আরও ভয়ঙ্কর হবে পরিস্থিতি। এবার অনাহারে মরতে হবে ইরাক সিরিয়া ও ইরানের বহু লোককে। গোটা বিশ্বের একাধিক বিজ্ঞানী আগেই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘকে। অবিলম্বে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ না করলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে।
ভয়ঙ্করতম প্রভাব বিস্তার করে চলেছে জলবায়ু পরিবর্তন। ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম তার প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্বে। গবেষকরা এই নিয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে। সবচেয়ে বিপন্ন পরিস্থিতি হতে চলেছে সিরিয়া ইরাক এবং ইরানে। সেখানে ভয়াবহ আকার নেবে জলবায়ু পরিবর্তন। ইরাক এবং ইরানকে প্রবল খরার মধ্যে পড়তে হবে। যার জন্য প্রবল খাদ্য সংকট তৈরি হবে এই তিন দেশে। একেবারে খাবারের জন্য হাহাকার পড়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন, পানির অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। ওয়াটার রিসোর্সেস ইন্সটিটিউটের (ডব্লিউআরআই) পরিচালক চার্লস আইসল্যান্ড জানান, খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে তোলার উদ্দেশে ইরান, ইরাক ও জর্ডানসহ কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জমিতে সেঁচ দিচ্ছে। একইসঙ্গে অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে গেছে।
চার্লস বলেন, বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে যে পরিমাণ পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করছে, তার চেয়েও অনেক বেশি পানি তারা ব্যবহার করছেন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে, কারণ সেখানে যে গতিতে পানি জমা হয়, তার চেয়েও অনেক দ্রুত পানি তুলে ফেলা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন থামানো বা এর গতিকে ধীর করে দেওয়ার জন্য অনেক কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কথাবার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসছে নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ–২৬)। এই সম্মেলনেও আগের ধারাবাহিকতা চালু থাকবে।
তারা বলেন, জলবায়ু সম্মেলনগুলোর মূল সুরে সমস্যা সমাধানের কোনো ব্যাপার থাকে না। কারণ, এর মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কিন্তু এমন একটা ভাব করা হয় যে সমস্যাটি আমলে নেওয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, দুনিয়ার উন্নয়নের মডেল যেন প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি যেমন পরিবেশগত, তেমনি একই সঙ্গে তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকও বটে। উন্নত দেশগুলোর কারণেই এই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে তাদের কার্বন উদ্গিরণ হ্রাসে বাধ্য করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, কার্যকর কূটনীতি ও রাজনীতি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২৪
আপনার মতামত জানানঃ