জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। এর মধ্যে বন্যা, তাপদাহের মত বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনাও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। প্রায় প্রায়ই দেশের কোনো না কোনো জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়ার খবর আসছে সংবাদ মাধ্যমে।
দিনাজপুর শহরে বজ্রপাতে চার কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তখনই আহত হয়েছেন আরও দুই কিশোর। এর আধা ঘণ্টার মাথায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আবদুলপুর ইউনিয়নে বজ্রপাতে তিন তরুণের মৃত্যু হয়।
দিনাজপুর শহরে মৃতরা হলো, আইনুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (১৩) ও আপন ইসলাম (১৪), বাবুল হোসেনের ছেলে হাসান আলী (১৪), প্রয়াত সিদ্দিক হোসেনের ছেলে হাসান আলী (১২) এবং সাজু মণ্ডলের ছেলে মিম (১৩)।
তারা সবাই দিনাজপুর শহরের নিউটাউন এলাকার বাসিন্দা। এই ঘটনায় আহত দুজন হলেন, মমিনুল ইসলাম (১৫) এবং আতিক (১৫)। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
চিরিরবন্দর উপজেলায় মারা যাওয়া তিন জন যুবক হলেন সুখদেবপুর ভুড়িয়াপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (২৮), আলতাফ হোসেনের ছেলে আব্বাস আলী (২৫) এবং মোকছেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৬)।
দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বৃষ্টিতে এই কিশোররা ৮ নম্বর নিউটাউন এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। সোমবার বেলা ৩টার দিকে বাড়িটিতে বজ্রপাত হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে দুই জনের মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, বজ্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আরও দুই কিশোরের মৃত্যু হয়।
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী শামীম হোসেন বলেন, আহত দুই কিশোরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এবছর বজ্রপাতে একসাথে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা গ্রামে নদীর ধারে এ ঘটনা ঘটে।
এনাদের মধ্যে ১৬ জন নিহতের নাম জানা যায়। এনারা হলেন- জমিলা (৫৮), তবজুল (৭০), আদল (৩৫), রফিকুল (৬০), লেচন (৫০), সজীব (২২), টকি বেগম (৩০), আলম (৪৫), পাতু (৪০), সহবুল (৩০), বেলি বেগম (৩২), বাবলু (২৬), মোছা. মোৗসুমী (২৫), টিপু সুলতান (৪৫), বাবু (২০) ও অসিকুল ইসলাম ডাকু (২৪)।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন মাস্টার এক জাতীয় দৈনিককে জানান, সদর উপজেলার নারায়ণপুর থেকে বউভাতের অনুষ্ঠানে আসার পথে বৃষ্টি শুরু হলে নৌকার সবাই নদীর ধারে একটি অস্থায়ী ছাউনির নিচে আশ্রয় নেন। এ সময় সেখানে হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলেই ১৫ থেকে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মতো মারা গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মৃতদের মধ্যে ১৯ জন বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার যাত্রী ছিলেন। এছাড়া মৃত আরেকজন দক্ষিণ পাকা গ্রামের নৌকার মাঝি ছিলেন। সব মিলে নৌকায় নারী-শিশু মিলে ৫৫ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই বৃষ্টি আসার পর নৌকা থেকে নেমে নদীর ধারে উঠে আসেন।
আহতদের শিবগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মৃতদের পরিচয় জানতে সুর্যনারায়ণপুরে পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রাকিবসহ পুলিশের একটি দল গেছেন বলে জানান শিবগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ হোসেন। স্থানীয়রা ২০ জন বললেও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী বিকেল ৪টায় জানান মৃতের সংখ্যা ১৭ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২৫৮
আপনার মতামত জানানঃ