বুলেট চলার গতিতে আফগানিস্তানের পুরোটা দখল নিচ্ছে তালিবানরা। আফগান সরকার আর তালিবানের সংঘর্ষে তালিবানরাই জয়ী হয়ে দখলে নিচ্ছে শহরগুলো। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের প্রয়োজনও পড়ছে না, অল্প পরিশ্রমেই তালিবানরা দখল করতে সক্ষম হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। দ্রুতগতিতে গোটা আফগানিস্তান নিজেদের দখলে নিয়ে এসে এখন কাবুলের অভিমুখে তালিবানরা, তাদের হামলার আশঙ্কায় শহরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের। কাবুল বাদে আফগানিস্তানের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বৃহত্তম শহর তালিবানের দখলে। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়া কাবুল থেকে তারা মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
আজ রোববার (১৫ আগস্ট) রবিবার সকালে আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের শহর জালালাবাদ বিনা যুদ্ধে দখলে নেয় তালিবানরা, এখন শুধুমাত্র কাবুল শহরটিই সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম এই শহরটি রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত। আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কাবুলই এখন তালিবানের দখলে যেতে বাকি আছে। জালালাবাদ দখলে নেয়ার মানে, তালিবানরা দেশটির সাথে পাকিস্তানের সংযোগকারী সড়কগুলোও নিজেদের করে নিয়েছে।
এর আগে গতকাল শনিবার (১৪ আগস্ট) আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান শহর মাজার–ই–শরিফ দখলে নিয়েছে তালিবান। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সফর করার কয়েক দিনের মধ্যেই শহরটি আফগান সরকারি বাহিনীর হাতছাড়া হলো। এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের সবগুলো বড় শহরে তালিবান যোদ্ধারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।
মাজার–ই–শরিফ আফগানিস্তানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। দেশটির বালখ প্রদেশের রাজধানী এটি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার শহরটি প্রায় বিনা বাধায় দখল করে নিয়েছে তালিবান। সরকারি বাহিনীর বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি তাদের। বালখের প্রাদেশিক আইনপ্রণেতা আব্বাস ইব্রাহিমজাদা এই তথ্য জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালিবান। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ লাভ তালিবানের জন্য বিশাল অর্জন হিসেবে ধরা দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীর জন্য এটি ধরা দিয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয় হিসেবে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দহারও দখলে নিয়েছে তালিবান। তালিবানদের এক মুখপাত্র আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘কান্দাহার পুরোপুরি দখলে এসেছে। বিদ্রোহীরা শহরের শহিদ স্কোয়ারে পৌঁছে গেছেন।” খবর আল-জাজিরা ও এএফপি’র
দেশটির দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বৃহত্তম শহরগুলো তালিবানের হাতে পতন হওয়ায় এখন রাজধানী কাবুল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইরত সরকারি বাহিনীর সদস্যরা কোনও ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অক্ষম।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একেবারে কাছাকাছি এলাকায় চলে এসেছে দেশটির তালিবান গোষ্ঠী। গতকাল শনিবার কাবুলের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে এই গোষ্ঠীটি। তাদের নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের মুখে রাজধানী অভিমুখে বেসামরিক নাগরিকদের ঢল শুরু হয়েছে। স্থানীয় একজন আইনপ্রণেতা শনিবার মার্কিন বার্তাসংস্থা এপিকে বলেছেন, বর্তমানে রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণের চার আসিয়াব জেলায় পৌঁছে গেছে তালিবানরা।
এদিকে কাবুলের আমেরিকান দূতাবাস থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার কাজে সহায়তা করতে আফগানিস্তানে ৫ হাজার সেনা পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ দূতাবাসকর্মীকে ফিরিয়ে আনতে কাবুল বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে সহিংসতার কারণে নতুন করে আরও আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে নিরাপত্তার আশায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাজধানী কাবুলে পালিয়ে গেছেন। এছাড়া দখলকৃত এলাকায় নারীদেরকে জোরপূর্বক বোরকা পরিধানে বাধ্য করছে তালিবান যোদ্ধারা। এর পাশাপাশি সামাজিক নিয়মকানুন ভঙ্গের অভিযোগে তালিবান যোদ্ধারা সাধারণ মানুষকে মারধরসহ নির্যাতন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ৩০ দিনের মধ্যে তালিবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা আগে যে অনুমান করেছিলেন; সেটি কার্যত ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে। মার্কিন নিরাপত্তা সূত্র বলছে, মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণার আগেই কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালিবানের হাতে যাওয়ার হুমকি রয়েছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ