মার্কিন সেনাসহ সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আফগানিস্তান জুড়ে সরকারি বাহিনী ও তালিবান যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা দখলে নিচ্ছে তালিবান। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের নিয়ন্ত্রণ ইতোমধ্যেই তালিবান নিয়ে নিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে ফের সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। তবে তা মূলত স্বল্প সময়ের জন্য; আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত দূতাবাসকর্মী ও নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনাই মূল লক্ষ্য। তবে এ সিদ্ধান্ত এমন দিন নেওয়া হলো, যখন উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালিবানের হাতে হেরাত ও গজনির পতন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের এই সেনা পাঠানো নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, তার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে অন্য যুদ্ধ পরিকল্পনা।
পাশাপাশি আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান শহর এবং দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গাহ দখল করে নিয়েছে তালিবান। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের দখল নেওয়ার পরদিনই তালিবান যোদ্ধাদের হাতে লস্কর গাহের পতন হলো। স্থানীয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
এদিকে, আজ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পুনরায় সেনা মোতায়েনের তথ্য জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আমেরিকান দূতাবাস থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার কাজে সহায়তা করতে আফগানিস্তানে প্রায় ৩ হাজার সেনা পাঠাচ্ছে তারা। দেশটি জানিয়েছে, বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ দূতাবাসকর্মীকে ফিরিয়ে আনতে কাবুল বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, কাবুলে ৬০০ সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেনারা ওই দেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপদে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে সহায়তা করবে। যদিও বিবিসি জানিয়েছে, কাবুলের ব্রিটিশ দূতাবাসে কর্মরত স্টাফের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এক বিবৃতিতে বলেন, অতিরিক্ত সেনারা কাবুলে ব্রিটেনের কূটনীতিকদের সহায়তা করবে, এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপদে দেশটি ছাড়ার ব্যবস্থা করবে। এছাড়া যেসব আফগান নাগরিক এতদিন ব্রিটিশ সেনাদের সহায়তা করেছে তাদের রক্ষায়ও কাজ করবে।
এদিকে, তালিবানের সঙ্গে কার্যকর একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এই আহ্বান জানান বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
আফগানিস্তান জুড়ে তালিবান যোদ্ধাদের তীব্র হামলা ও অগ্রাভিযানের মুখে বোরেল কাবুলকে এই পরামর্শ দিলেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সকল রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সমাধান, অংশীদারদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করা এবং ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে তালিবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান এবং নারী, যুবক ও সংখ্যালঘুসহ সকল আফগান নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর মাধ্যমেই আফগানিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা অব্যাহত থাকতে পারে।
মার্কিন সেনাসহ সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই চলতি বছরের মে মাস থেকে আফগানিস্তান জুড়ে হামলা জোরদার করেছে তালিবান। ইতোমধ্যেই গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা কমপক্ষে ১২ আফগান প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়েছে।
তালিবান খুব দ্রুত গতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এখন বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো দখল করছে তালিবান। এতে করে দেশটি মারাত্মক নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে।
তালিবান বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির মুখে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মদ আহমদজাইকে অপরসারণ করেছে আফগান সরকার। তার স্থলে নতুন আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার দখলের দাবি করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালিবান। তাদের এই দাবি সত্য হলে তা হবে আফগান ভূখণ্ডে মিলিশিয়াদের বড় ধরনের জয়। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কান্দাহার শহরটি একসময় তালিবানের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এছাড়া দেশের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে শহরটির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেশি। তালিবানের মুখপাত্রও জানিয়েছেন যে, ‘কান্দাহার পুরোপুরি দখলে নেয়া হয়েছে।’ তবে এই দাবির ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বিবিসি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৫৯
আপনার মতামত জানানঃ