বেপরোয়া অভিযান ও বেসামরিক লোকজন হত্যা অব্যাহত রাখলে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাবে না তালিবান। আফগানিস্তানের জাতীয় ক্ষমতায় আসীন হতে মরিয়া তালিবানগোষ্ঠীর জন্য এই দুঃসংবাদ দিল হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি। আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি আদায়ে মরিয়া হয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া তালিবানের জন্য এটা অশনিসংকেতই।
আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তালিবানগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন জেন সাকি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালিবানগোষ্ঠী যা যা করছে, তারা যদি কখনও আন্তর্জাতিক বৈধতা চায়, সেক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি তারা কোনো প্রকার আন্তর্জাতিক বৈধতা পাবে না।’
‘এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, আফগানিস্তানের জাতীয় ক্ষমতায় যেতে যে পথ তালিবান অবলম্বন করছে, অবশ্যই তা থেকে তাদের সরে আসতে হবে এবং সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে তারা যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করছে, সেই পরিমাণ শক্তি দেশে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশে ব্যয় করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই বক্তব্যে আন্তর্জাতিক বৈধতার পথ আরও সংকীর্ণ হলো তালিবানের। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সমস্যাজনক অবস্থানে আছে তালিবান। মূলত বৈধতা আদায়ের ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে তারা। শরিয়া আইনের স্থলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শাসন প্রতিষ্ঠার যে কূটনীতিকদের প্রস্তাব বাইরের দেশ দিচ্ছে, তালিবানের শীর্ষ নেতারা যদি তাতে রাজি হন, তাহলে তালিবানের নিচের সারির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হবে। আবার তালিবান নেতৃত্ব যদি বাইরের দেশের প্রস্তাব মেনে না নেয়, তাহলে তাদের বিদেশিদের বৈধতা দেওয়া কঠিন হবে। এ দুটি বিষয়ের ভারসাম্য রেখে কী উপায়ে বৈধতা পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালিবান।
এদিকে, সম্প্রতি পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া একটি নথি থেকে জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারের সমর্থনে আগামী কয়েক সপ্তাহ তালিবানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তালিবানকে কোণঠাসা করে তাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করাই মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভুলে যাচ্ছে গত ২০ বছরে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে যেখানে তালিবানকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি, সেখানে আবার বিমান হামলায় তারা পিছু হটবে এমনটা আশা করা বোকামি।
ইতিমধ্যে,ল আফগানিস্তানের নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানয ইতোমধ্যে তালিবান দখলে চলে গেছে। এছাড়া জাওজাজান প্রদেশের রাজধানী শেবেরগান দখল করেছে তালিবান। আজ শনিবার (৭ আগস্ট) প্রদেশটির ডেপুটি গভর্নর কাদের মালিয়া এই তথ্য জানিয়েছেন। এর ফলে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় প্রাদেশিক রাজধানী দখল করলো তালিবানরা। হেলমান্দ প্রদেশের রাজাধানী লস্কর গাহ তাদের দখলে যাওয়াও এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এছাড়া একটি জেলখানা দখল করেছে তালিবান যোদ্ধারা। দখলের পর সেখানে আটক সব অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দেশটির জোজ্জন প্রদেশে ঘটেছে এ ঘটনা। দখল অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আফগানিস্তান জুড়ে ব্যাপকভাবে হত্যা ও রক্তপাতও চালাচ্ছে তালিবানগোষ্ঠী।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা করেছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্ক। সে সময় এই গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটি ছিল তালিবান শাসিত আফগানিস্তান। টুইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। অভিযানে পতন হয় তালিবান সরকারের।
অভিযানের প্রায় ২০ বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।
বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু করেছে কট্টরপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী তালিবান। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার অর্ধেকেরও বেশির দখল নিয়েছে তালিবান। তালিবান দখলকৃত এলাকাসমূহের মধ্যে ইরান ও পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোও আছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২২০৯
আপনার মতামত জানানঃ