মিয়ানমারে চলছে বীভৎস গণহত্যা। মিয়ানমারে গহীন জঙ্গল এলাকা থেকে ৪০টি মরদেহ খুঁজে পেয়েছে সেনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া একটি মিলিশিয়া বাহিনী ও স্থানীয়রা।নিহতদের শরীরে নির্যাতনের আলামত পাওয়া গেছে। ওই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর এক সদস্য এবং দেশটির গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির সাগাইং অঞ্চলে কানি শহরের আশপাশে জঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলে সামরিক শাসনের বিরোধীদের গড়ে তোলা মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই হয়েছে।
কিছু মরদেহে নির্যাতনের চিহ্নও রয়েছে বলে জানিয়েছেন মিলিশিয়া বাহিনীর এক সদস্য। জঙ্গল থেকে এতগুলো লাশ উদ্ধার মিয়ানমার সেনা সরকারের চলমান নৃশংসতার সাক্ষী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে টেলিফোন করলেও কোনও সাড়া পায়নি রয়টার্স।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কানি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর একজন সদস্য বলেছেন, বর্তমানে ওই এলাকায় লড়াই কার্যত বন্ধ আছে। তবে আরও মরদেহ পাওয়া যাবে কি-না সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
প্রতিশোধমূলক হত্যা ও লুটপাটের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং জান্তাপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী অপর একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে দায়ী করে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার অনেক গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী শহরে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারে গণহত্যা চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘকে সতর্ক করেছেন রাষ্ট্রদূত কিওয়া মোয়ে তান। তিনি জাতিসংঘে নিয়োজিত মিয়ানমারের দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এক চিঠিতে তিনি বলেন, অবৈধ সরকার দেশটিতে গণহত্যায় মেতে উঠেছে। জান্তা তাকে রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে বহিষ্কার করলেও দায়িত্ব থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
জান্তা সরকার কিয়াউ মোয়ে তানকে বরখাস্ত করার পর তারা বলছেন, তিনি এখন আর মিয়ানমারকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। কিন্তু সামরিক বাহিনীর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এই দূত। শুধু তিনি নন, জাতিসংঘও তাকে এই পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবেই এখনও বিবেচনা করছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসকে লেখা এক চিঠিতে কিয়াউ মোয়ে তান জানান, গত জুলাই মাসে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাগেইং এলাকার কানি থেকে ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিয়ানমার জেনারেলরা।
এদিকে এএফপি বলছে, স্বাধীনভাবে এই ঘটনা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কারণ সাগেইং এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
কিয়াউ মোয়ে তান অভিযোগ করেছেন যে, গত ৯ ও ১০ জুলাইয়ের মধ্যে সেনা সদস্যরা একটি গ্রামে নির্যাতন, নিপীড়ন চালায় এবং সেখানে ১৬ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এরপরেই ওই এলাকা থেকে ১০ হাজার মানুষ নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
এদিকে টানা কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের পর গত ২৬ জুলাই আরও ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গত ২৮ জুলাই ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরসহ আরও ১১ জনকে হত্যা করা হয় এবং গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন কিয়াউ মোয়ে তান।
জাতিসংঘ প্রধানকে লেখা চিঠিতে জান্তা সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন কিয়াউ মোয়ে তান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমারে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি।
এই দূত এএফপিকে বলেন, আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে এ ধরনের নৃশংসতা চালিয়ে যেতে দিতে পারি না।
কিয়াউ মোয়ে তান আরও বলেন, জাতিসংঘ, বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।
গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বেসামরিক সরকারের পক্ষে থেকে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলছে, বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নেয়াদের বিরুদ্ধে অভিযানে এখন পর্যন্ত ৯ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
এদিকে মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তিনি গত রোববার এক টেলিভিশন ভাষণে আগামী দুই বছরের মধ্যে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন তিনি। তার এই ঘোষণাকে সামরিক শাসন দীর্ঘায়িত করার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৬
আপনার মতামত জানানঃ