ক্রমাগতই আফগানিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির তীব্র অবনতি হয়েছে। তালিবান এবং সরকারি বাহিনী লড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে কান্দাহার প্রদেশের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গত দেড় মাসে কান্দাহার প্রদেশে সম্ভবত আটশ থেকে নয়শ জনকে হত্যা করেছে তালিবান। এমনটাই জানিয়েছেন প্রদেশটির সাবেক পুলিশ প্রধান এবং হাই কাউন্সিল অব দ্য ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের (এইচসিএনআর) সদস্য তাদিন খান।
কান্দাহার প্রসঙ্গে তাদিন খান বলেন, ‘তারা সম্ভবত গত দেড় মাসে আটশ থেকে নয়শ জনকে হত্যা করেছে। অসংখ্য মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। বোল্ডাকে (কান্দাহারের স্পিন বোল্ডক জেলা) যে বর্বরতা ঘটেছে তা ক্ষমার অযোগ্য।’
তাদিন খানের মতে, তালিবানরা জোর করে এই নয়শ জনকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।
আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এআইএইচআরসি) প্রধান শাহরজাদ আকবর বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়, এটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
আফগানিস্তানের সংসদ সদস্য আরিফ রহমানি বলেন, ‘তালিবানরা ‘মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না’ এবং তারা অনেক বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, তালিবানরা গজনি, কান্দাহার এবং অন্যান্য আফগান প্রদেশে অগ্রসর হচ্ছে। তারা আফগান সরকারের সঙ্গে যুক্ত আটক সেনা, পুলিশ এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে।
সংস্থাটির কর্মকর্তা প্যাট্রিসিয়া গসম্যান বলেন, ‘সংক্ষিপ্তভাবে হেফাজতে থাকা কাউকে হত্যা করা (বেসামরিক বা যোদ্ধা হোক) জেনেভা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ। এ ধরনের নৃশংসতার ওপর তদারকি করা তালিবান কমান্ডাররাও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী।’
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহ শহরে তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ বলেছে, যুদ্ধে অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আফগানিস্তানের দক্ষিণ হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহ দখলে নিতে তীব্র লড়াই করছে তালিবান। আফগান সেনাবাহিনী ও তালিবান যোদ্ধাদের এই লড়াইয়ে নিহতদের মৃতদেহ সড়কে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।
বিবিসি আফগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই অঞ্চলের এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আমরা জানি না মৃতদেহগুলো বেসামরিক নাগরিকদের নাকি তালিবানের।’এছাড়াও জীবন বাঁচাতে কয়েক ডজন পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে হেলমান্দ নদীর কাছে বসতি স্থাপন করেছে।
লস্করগাহ শহরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আফগান সেনাবাহিনী ও তালিবান যোদ্ধাদের মধ্যে চলমান যুদ্ধ কয়েক হাজার বাসিন্দা আটকা পড়েছেন আবার অনেকেই জীবন বাঁচার জন্য এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে তালিবানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সেনা অভিযান শুরুর আগে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আফগান জেনারেল সামি সাদাত। লস্করগাহের প্রায় দুই লাখ বাসিন্দাদের দ্রুত সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন তালিবান যোদ্ধারা। তালিবানের কাছে আফগানিস্তানের প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তিনি বলেন, আপনারা যত তাড়াতাড়ি বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান। আপনারা গেলেই আমরা অভিযান শুরু করব। আমি জানি, আপনাদের পক্ষে বাড়িঘর ছাড়া কঠিন। আমাদের জন্যও এটা কঠিন। আপনারা যদি কিছুদিনের জন্য বাস্তুচ্যুত হন, তাহলে দয়া করে আমাদের ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তালিবানরা যেখানেই রয়েছে, সেখানেই লড়াই হবে। একজন তালিবানকেও জীবিত ছাড়ব না।
যদি লস্করগাহের নিয়ন্ত্রণ তালিবান নিতে পারে, তবে এটি হবে ২০১৬ সালের পর থেকে প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেওয়ার ঘটনা।
দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। এর মধ্যে দেশের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি জেলার দখল নিয়েছে তালিবান। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এ অগ্রযাত্রা রুখতে হিমশিম খাচ্ছে আফগান সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৫৮
আপনার মতামত জানানঃ