ঢাকাই চলচ্চিত্রের চিত্রনায়িকা একার বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে চিত্রনায়িকা একাকে আটক করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে ইয়াবা, বিদেশি মদ এবং গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর রামপুরার নিঝুম এলাকার তার বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, রামপুরার নিঝুম এলাকার বাসা থেকে চিত্রনায়িকা একাকে আটক করা হয়েছে। এ সময় গৃহকর্মী হাজেরা বেগমকে (৩৫) চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা শেষে গৃহকর্মী হাজেরা বেগম থানায় এসে অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে একাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, চিত্রনায়িকা একার ঘর থেকে ইয়াবা, কয়েক বোতল বিদেশি মদ ও গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাদক ও গৃহকর্মী নির্যাতন আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও জানান, বিকেলে তার পাশের ফ্ল্যাট থেকে একটি ফোন আসে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ। পুলিশ জানতে পারে যে, একা যে বিল্ডিংয়ের থাকেন তার পাশের ফ্লাটেই এই ঘটনা। এরপর ৯৯৯ থেকে হাতিরঝিল থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ গিয়ে সেই বাসা থেকে একাকে আটক করে।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানায়, ইয়াবা গণনার কাজ চলছে। আহত গৃহকর্মীর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় এলে একার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে।
আহত গৃহকর্মীর স্বামী বলেন, তার স্ত্রী হাজেরা বাসা বাড়িতে ছুটা কাজ করে। ঐ নায়িকার বাসায় কাজ করতো ৩ মাস যাবত। শনিবার একা ওই ভবনে ফ্ল্যাট পরিবর্তন করছিলেন। তাই হাজেরাকে তার সাথে থাকতে বলেন। কিন্তু হাজেরা বলেন, অন্য বাসায় কাজ রয়েছে। আগে বললে অন্য বাসায় জানিয়ে আসতে পারতাম। এতে একা বলেন, তোমার আর কাজ করতে হবে না। এসব কথার প্রেক্ষিতে হাজেরা বলেছিল যে ঠিক আছে, আমার বেতন দিয়ে দেন। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে আমার স্ত্রী হাজেরাকে ভারী কোন বস্তু দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানায়, তিন-চার মাস ধরে চিত্রনায়িকা একা তার গৃহকর্মীকে বেতন দিতেন না। গৃহকর্মী সেই টাকা চাইতে গেলে তাকে মারধর করেন একা। মারধরে গৃহকর্মী অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোববার (১ আগস্ট) তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৯৯৭ সালে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘রাখাল রাজা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে আয়েশা আরবী ওরফে একার বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হয়। এরপর চিত্রনায়ক মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘তেজী’ সিনেমায় হাজির হলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এক মান্নার সঙ্গেই টানা বিশটিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা।
মান্নার পর রুবেল, অমিত, আমিন খান, রিয়াজ, আলেকজান্ডার বো, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খানসহ অনেকের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন একা। কিন্তু হুট করেই রহস্যজনকভাবে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে দূরে সরে যান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে গৃহকর্মী নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। অন্যের বাসায় কাজ করা হতভাগাদের ভাগ্যলিপি যেন দিনদিন আরও চরমে গিয়ে ঠেকছে। মানবাধিকারকর্মী, পুলিশ-ওসি ও চিত্রনায়িকাদের মত ব্যক্তিদের হাত থেকেও রেহাই পাচ্ছে না তারা। পান থেকে একটু চুন খসে পড়লেই মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তারা।
তারা বলেন, অবস্থা দেখে মনে হয়, এদেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ হওয়ার নয়। একেবারে লাগাতার ‘চলছে ও চলবে’ পরিস্থিতি। নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের অপরাধের গুরুত্ব বুঝে এদের দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি কার্যকর করা উচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে এটা যেমন সুখের ও গৌরবের তেমনি বিপরীতক্রমে ধর্ষক ও নির্যাতকের দেশ হিসেবে আমাদের যে পরিচিতি হচ্ছে সেটা চরম লজ্জার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩২৭
আপনার মতামত জানানঃ