আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে জাতিসংঘের মূল স্থাপনায় তালিবানের হামলায় একজন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন। এদিকে, শহরের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে আফগান সরকার। গত এক মাসেই সরকারের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
দেশটিতে জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রধানের বরাতে রয়টার্স জানায়, শুক্রবার রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালানো হয় হেরাতের জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে। তালিবান যোদ্ধারা হেরাত শহরের অনেকখানি ভেতরে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই আক্রমণ করা হয়। অবশ্য জাতিসংঘের কোনো কর্মকর্তা এতে হতাহত হননি।
হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ বলেছে, আফগানিস্তানের ‘সরকারবিরোধী’ সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এরি কানকো এই হামলার হোতাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামলায় জাতিসংঘের কোনো কর্মীর ক্ষতি হয়নি।
জাতিসংঘের কর্মীদের দাবি, পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই এ হামলা চালানো হয়েছে, হামলাকারীরা জাতিসংঘ দপ্তরের প্রবেশপথে গুলি চালায় ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। জাতিসংঘের আফগান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি দিবরা লিওন এ হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যায়িত করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, হেরাত প্রদেশের কয়েকটি জেলা দখল করে নিয়েছে আফগানিস্তান। শুক্রবার হেরাত শহর থেকে একটু দূরে তালিবান ও আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই সংঘাতের কারণে ওই এলাকার অনেককেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়।
ইউনাইটেড নেশন্স অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন আফগানিস্তান (ইউএনএএমএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সংঘর্ষ চলাকালে হেরাতে জাতিসংঘের কার্যালয় হামলার শিকার হয়। রকেট-চালিত গ্রেনেড ও গুলি দিয়ে এই হামলা চালানো হয়।
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রও কড়া নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর জেক সুলিভান বলেছেন, আফগানিস্তানে জাতিসংঘ বেসামরিক সত্তা। তারা সেখানে মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তায় কাজ করেন।
টুইটারে তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, যেখানে সংঘাত হয়েছে তার খুব কাছেই অবস্থিত জাতিসংঘের অফিস। ওই পুলিশ সদস্য হয়তো ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। জাতিসংঘের কার্যালয় মোটেও হুমকির মুখে নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় তালিবান যোদ্ধারা প্রবেশ করেছে এমন দ্বিতীয় প্রাদেশিক রাজধানী শহর হচ্ছে হেরাত। একদিন আগে তারা দক্ষিণের হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগড়ে প্রবেশ করে এবং সেখানে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে। শহরের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় শহর ছেড়ে পালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সেদেশ থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর গত দুই মাসে তালিবান বাহিনী আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তবে তারা এখনও কোনো প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তালিবান যোদ্ধারা লস্করগড় শহরের বিভিন্ন দিক থেকে হামলা শুরু করে। সরকারি বাহিনী বিমান হামলার সহায়তায় তালিবান বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারলেও, বেসামরিক নাগরিকদের উপস্থিতি অভিযান ব্যাহত করছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৯০ শতাংশই এখন তালিবানের দখলে বলে দাবি গোষ্ঠীটির। শুধু তাই নয়, এসব সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলোও এখন তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। তোলো নিউজ জানিয়েছে, গত এক মাসে তালিবানের কাছে সীমান্তবর্তী শহরগুলোর অন্তত সাতটি রাজস্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সরকার।
এদিকে, আফগানিস্তানে তালিবানের উত্থানে বড় সংকটের মুখে পড়েছেন দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা। সীমান্তবর্তী শহরগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির দখলে চলে যাওয়ায় পণ্য পরিবহণ খরচ হু হু করে বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের একদিকে তালিবানকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। কর ছাড় দিচ্ছে না সরকারও। তবে তালিবানের কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। গত এক মাসেই সরকারের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ