ধর্ষণ বৃদ্ধির জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করে কয়েকবারই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ইমরান খান। গত এপ্রিলে পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, নারীদের অশ্লীল পোশাকের কারণেই পাকিস্তানে যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে— বিশেষ করে শিশুদের বিরুদ্ধে।
এই মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে শুরু হওয়া সমালোচনার মধ্যেই গত জুন মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবারও বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
অ্যাক্সিওসের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘একজন নারী যদি খুবই স্বল্প বসন পরেন, তাহলে এটি পুরুষদের ওপর প্রভাব ফেলবে; যদি তারা রোবট না হন। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের ব্যাপার।’
ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নারীর পোশাককে দোষারোপ করে তুমুল বিতর্কে পড়েন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইমরান খানের ওই মন্তব্যের পর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন অধিকার সংগঠন। তার এমন মন্তব্যের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনকি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইমরান খানের কথার তীব্র সমালোচনা করে। ইমরান খানের মন্তব্যকে ‘ত্রুটিপূর্ণ, রূঢ় ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে এবার পল্টি মারলেন ইমরান খান। ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বিষয়ে নিজের পুরনো অবস্থান পাল্টেছেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কোনো নারী যদি ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার শিকার হন, সেক্ষেত্রে ওই ঘটনার দায় সম্পূর্ণ ধর্ষক বা নিপীড়ক পুরুষের। ধর্ষণ কিংবা যৌন সহিংসতার শিকার নারীর কোনো দায় এক্ষেত্রে নেই বলে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল পিবিএস নিউজ আওয়ারকে মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ব্যাপার পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন, আর তা হলো— ধর্ষণ বা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বিষয়ক যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি ওই অপরাধ করেছে— একমাত্র এবং একমাত্র সেই দায়ী।’
‘নারীর পোশাককে এ জন্য কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না। ধর্ষণ বা যে কোনো প্রকার যৌন সহিংসতার জন্য দায়ী কিংবা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে ধর্ষক। ধর্ষণ-সহিংসতার শিকার নারী কোনোভাবেই এজন্য দায়ী নন।’
‘নারীর পোশাককে এ জন্য কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না। ধর্ষণ বা যে কোনো প্রকার যৌন সহিংসতার জন্য দায়ী কিংবা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে ধর্ষক। ধর্ষণ-সহিংসতার শিকার নারী কোনোভাবেই এজন্য দায়ী নন।’
ইমরান খান বলেন, আমি কখনোই এমন বোকার মতো কথা বলিনি। আমি কখনো বলিনি ‘ধর্ষণের জন্য দায়ী ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি’।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিবিএস নিউজ আওয়ারে এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খানকে জিজ্ঞেস করা হয় তার আগের মন্তব্য নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধর্ষণ করেন, সে জন্য শুধু তিনিই দায়ী। এটা আমাদের পরিষ্কার হতে হবে। নারী যতই উসকানি দিক কিংবা তিনি যে পোশাকই পরে থাকুন না কেন, যে ব্যক্তি ধর্ষণ করেন তিনিই তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। কখনোই ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি দায়ি নন।’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সাক্ষাৎকারে জুডি উডরফকে বলেন, তার মন্তব্যটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এবং ‘সম্পূর্ণভাবে’ বিষয়ের বাইরে নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
ইমরান খান বলেন, তারা কেবল পাকিস্তানের সমাজের কথা বলেছিলেন যেখানে ক্রমাগত যৌন অপরাধ বেড়েই চলেছে। এ জন্য শুধু নারীরা জড়িত নন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের চেয়েও বেশি হচ্ছে শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা। আমার মন্তব্য সেই প্রসঙ্গে ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে ‘পর্দা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং যোগ করেছেন যে এই শব্দটির অর্থ কেবল পোশাক নয় বা কেবল নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
তিনি বলেন ‘পর্দা’ পুরুষদের জন্যও এবং একটি সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভনকে এটি কমিয়ে আনার অর্থ হিসেবেই সেখানে ব্যবহার হয়েছে।’
ইমরান খান বলেন, ‘আমি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছি সেটা সম্পর্কে আমি জানি। আমি কখনোই এমন বোকার মতো কথা বলিনি যেখানে ধর্ষণের শিকার কাউকে আমি দায়ী করব। এ ক্ষেত্রে সবসময় দায়ী ধর্ষণকারী।’
উডরফ প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ইসলামিক দেশ হিসেবে পাকিস্তান নারীর শক্ত অবস্থানকে বাধা দেয় কি না।
ইমরান খান বলেন, ‘অবশ্যই না। ইসলাম নারীদের সম্মান দিয়েছে।’
সারা বিশ্ব ঘোরার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে নারীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গেই দেখা হয়। পাকিস্তান এমন কী বিশ্বের অন্য ইসলামী দেশগুলোতেও নারীদের খুব সম্মানের সঙ্গে দেখা হয়।’
পাকিস্তানে সম্প্রতি ব্যাপক হারে বেড়েছে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের পুলিশ স্টেশনসমূহে প্রতিদিন গড়ে ১১টি ধর্ষণের অভিযোগ আসছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, গত ছয় বছরে পাকিস্তান পুলিশের কাছে আসা ধর্ষণের অভিযোগের মোট সংখ্যা ২২ হাজারেরও বেশি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১১
আপনার মতামত জানানঃ