২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে আফগানিস্তানে হতাহত নারী ও শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আজ সোমবার জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে জাতিসংঘ নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণনা শুরু করার পর থেকে যে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় আফগানিস্তানে ২০২১ সালের প্রথমার্ধে বেশি নারী এবং শিশু হতাহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যাযায়ী, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুদ্ধকবলিত আফগানিস্তানে সংঘাতে হতাহত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসের পর থেকেই মূলত মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। কারণ এ সময় থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে এক হাজার ৬৫৯ জন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৫৪ জন, যা গত বছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৬৮ শিশু নিহত হয়েছে, যা মোট সংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। আর আহত হয়েছে ১ হাজার ২১৪ জন। নারী নিহত হয়েছেন ২১৯ জন, আহত হয়েছেন ৫০৮ জন। শুধু মে ও জুন মাসে নিহত হয়েছেন ৭৮৩ জন এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ৬০৯ জন।
এর মধ্যে ৩৯ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তালিবান, ৯ শতাংশ ইসলামিক স্টেট, ১৬ শতাংশ অজ্ঞাত, ২৩ শতাংশ সরকারি বাহিনী এবং ২ শতাংশ সরকারপন্থি সশস্ত্রগোষ্ঠী জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাকি ১১ শতাংশ নিহত হয়েছেন বন্দুকযুদ্ধে।
এদিকে, আফগানিস্তানে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি ও সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে সংলাপে বসতে আফগান সরকার ও তালিবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ ও ব্রিটেন। আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে একটি চূড়ান্ত চুক্তির আগে আপদকালীন সমাধান হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, এই প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানে একটি ‘অন্তর্বর্তী সরকার বা গঠনকাঠামো’ নিয়ে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হলো।
ইতালির রাজধানী রোমে গত ২২ জুলাই আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। ওই বৈঠকে মূলত আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নিয়ে আলোচনা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে দোহায় আফগান সরকার ও তালিবানের বৈঠক থেকে কোনো ফল বেরিয়ে আসেনি। ওই বৈঠক থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় গত সপ্তাহে আফগান সরকার ও তালিবানের মধ্যকার শান্তি আলোচনার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা হয়।
রোম বৈঠকের ঘোষণায় বলা হয়, আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষ করে সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে একটি চূড়ান্ত সমঝোতা অর্জন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারণে আমরা সে সমঝোতার আগে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছার জন্য আফগানিস্তানের দু’পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি; অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনায় বসা।
রোম বৈঠকের ঘোষণায় আমেরিকা, ইউরোপ ও ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা আরো বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী কোনো সরকারকে আন্তর্জাতিক সমাজ স্বীকৃতি দেবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৪৩
আপনার মতামত জানানঃ