আমাদের চারপাশে জমিজমা বিষয়ক প্রতারণার শেষ নেই। ঘরের পাশের প্রতিবেশীরা, আত্মীয়রা, এমনকি আমরা নিজেরাই এর ভুক্তভোগী। এই অপরাধ এতোবার সংগঠিত হচ্ছে আমাদের আশপাশে, এখন এই প্রতারণার ঘটনাগুলোকে সাধারণ লাগতে শুরু করেছে। পরিবারের মানুষদের মধ্যেই এত প্রকট হয়ে উঠেছে যে পরিবারের বাহিরের মানুষদের সাথে এই ধরণের ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
জমিজমা বিষয়ক মামলার রিপোর্টগুলো বছরের পর বছর ধরে আদালতে ঝুলতে থাকে। এমন ভোগান্তির কথা ভেবে কেউ কেউ মামলাই করেন না আবার কারও কারও জীবদ্দশাই পার হয়ে যায় ন্যায় বিচার পেতে। কেউ কেউ সালিশ বিচারেই ধামাচাপা দেয় ঘটনা।
এমনই এক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য বন্দর এলাকায়। তবে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে ভিন্ন উপায়ে। সুনীল দাস (৫৭) নামে এক লন্ড্রি ব্যবসায়ীর মরদেহ দেনাদার মো. ইউসুফ মুসল্লির বসতবাড়ির সামনে রেখে প্রতিবাদ করেছেন তার স্বজনরা।
আজ শনিবার (২৪ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে ইউসুফ মুসল্লির বাড়ির সামনে মরদেহ ফেলে রাখা হয়।
মৃত সুনীল দাসের স্ত্রী মাদুরী দাস অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী একজন লন্ড্রি ব্যবসায়ী। ‘স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ মুসল্লির কাছ থেকে তিনি ১২ লাখ টাকায় তিন শতক জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ইউসুফ মুসল্লি দীর্ঘ একযুগেও ওই জমি বুঝিয়ে দেননি। উপায় না পেয়ে আমার স্বামী সব টাকা ফেরত চান। কিন্তু ইউসুফ মুসল্লি টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন।
সুনীল দাসের ছোট ভাই পংকজ দাস বলেন, বড় ভাই সুনীল দাসের চিকিৎসার জন্য অল্প কিছু টাকাও আমরা চেয়েছিলাম, তাও পাইনি। যে কারণে টাকার অভাবে তার চিকিৎসাও করাতে পারিনি আমরা। ইউসুফ মুসল্লির কাছে পাওনা টাকার জন্য বহু দেনদরবার করা হয়েছে।
এ নিয়ে স্থানীয়রা সালিসও করেছেন। কিন্তু ইউসুফ মুসল্লি টাকা ফেরত দেননি। এই টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে সুনীল দাস অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় শুক্রবার রাতে নিজের বসতঘরে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়।
সুনীল দাস মারা যাওয়ার পর তার নিকট আত্মীয়রা শনিবার সকাল ১০টার মরদেহ নিয়ে ইউসুফ মুসল্লির ঘরের সামনে এনে রেখে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এ সময় আশপাশের শত শত মানুষ ভিড় করেন। দুপুরের পর সুনীল দাসের মরদেহ ইউসুফ মুসল্লির বাড়ির সামনে থেকে নিয়ে যান স্বজনরা।
এ বিষয়ে ইউসুফ মুসল্লি বলেন, এর আগে সুনীল দাসকে ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকাও তাকে ফেরত দেওয়া হবে। আর আমি পালিয়ে যাইনি। এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছি। এদিকে খবর পেয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, ইউসুফ মুসল্লি ও তার পরিবারের লোকজনকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন বলে শুনেছি। সুনীল দাসের পরিবারকে মরদেহ সৎকার করার জন্য বলা হয়েছে। আর পাওনা টাকা আদায় করে দেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২১৩১
আপনার মতামত জানানঃ