করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পৃথিবী এবার কাতর হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপে। অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ, দাবানল, বন্যার পর এবার ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধ্বসে ক্ষতির সম্মুখীন হলো ভারতের মুম্বাই। এখন অব্দি প্রাণহানি অন্তত ৩০ জনের। মুম্বাই এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় বাড়ি ও দেয়াল ধ্বসের ১১টি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
আজ রবিবার (১৮ জুলাই) কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বিপজ্জনক এলাকার মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া লাগতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানা যায়।
সূত্র মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বাইয়ের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী চারদিন মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রে ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। খোলা জায়গায় কোথাও না যাওয়ার জন্য জনগণকে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিএসসি পৌরসভা জানিয়েছে, রোববার ভোরে ভিখরোলি এলাকায় একটি আবাসিক ভবন ধ্বসে তিনজন মারা গেছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চেম্বুরের ভারত নগর থেকে ১৫ জন এবং ভিখরোলির সূর্য নগর এলাকা থেকে ৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আরও অনেক মানুষ আটকা পড়ে থাকার সন্দেহে দুই এলাকাতেই উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।
মুম্বাইতে শনিবার সন্ধ্যা ৮ থেকে রোববার ভোর ৮টা পর্যন্ত ১৭৬.৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে শহরের পূর্বাংশে ২০৪.০৭ এবং পশ্চিমাংশে ১৯৫.৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এমন ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মুম্বায়ের নিম্নাঞ্চল চুনাভট্টি, সায়ন, দাদার এবং গান্ধী মার্কেট, চেম্বুর ও কুরলা এলবিএস এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে জীবিতদের অনুসন্ধান চালাচ্ছেন বলে সেখানকার স্থানীয় টেলিভিশনে দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ধ্বংস্তূপের ভেতরে আরও মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারেন। অস্থায়ী স্ট্রেচারে করে সরু গলি দিয়ে জরুরি সেবার কর্মীরা আহতদের বহন করছেন।
বার্তা সংস্থা এএনআই’র এক ভিডিওতে দেখা গেছে বোরিভালীর পূর্ব এলাকায় স্রোতে অনেক গাড়ি ভেসে যাচ্ছে। সারারাত বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় শহরতলীর ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ট্রেনলাইনের ওপর জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় সিএসএমটি এবং থানের প্রধান লাইন বন্ধ করা হয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী নওয়াব মালিকা টুইটারে বলেছেন, বিপজ্জনক এলাকায় বসবাসরতদের দ্রুতই স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বন্যায় মৃতদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি ও আহতদের ৫০ হাজার রুপি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মুম্বাইয়ে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গ্রীষ্মকালীণ বৃষ্টিতে প্রায়ই ভবন ধ্বসে পড়ে। বিশেষ করে পুরনো ও অবৈধভাবে নির্মিত ভবন ধসে পড়ার ঘটনা বেশি।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৯৩৫
আপনার মতামত জানানঃ