করোনা মহামারি মোকাবেলা ও অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল এনেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত ৭ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ নেন ভারতের নতুন ৪৩ জন মন্ত্রী। কিন্তু গতকাল শনিবার মন্ত্রীদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)। আর তাতেই অবাক ভারতসহ গোটা বিশ্ব
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ মন্ত্রী কোটিপতি। আর ৪২ শতাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা। যার মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। অধিকাংশের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা ও রাহাজানির অভিযোগে মামলা হয়েছে।
মন্ত্রীদের এই ‘অপরাধ প্রবণতার’ পাশাপাশি সম্পদের পরিমাণও তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। ৯০ শতাংশ মন্ত্রীই কোটিপতি।
৩৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা ও ডাকাতির মতো ভয়াবহ মামলা। অর্থাৎ দেশটির মোট মন্ত্রীর ৩১ শতাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অপরাধের মামলা। এডিআর-এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলার বিরুদ্ধে গুরুতর ৯টি মামলা রয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, নবনিযুক্ত একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে একের বেশি মামলা। নতুন মন্ত্রিসভার ৭৮ সদস্যের মধ্যে ফৌজদারি মামলা রয়েছে মোট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জন বারলা, নিশীথ প্রামাণিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ।
এই ৩৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা ও ডাকাতির মতো ভয়াবহ মামলা। অর্থাৎ দেশটির মোট মন্ত্রীর ৩১ শতাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অপরাধের মামলা। এডিআর-এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলার বিরুদ্ধে গুরুতর ৯টি মামলা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের আরেক সংসদ সদস্য নিশীথ প্রমাণিকের বিরুদ্ধে রয়েছে মোট ১১টি মামলা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ। নির্বাচনের সময় অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সাত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী মোদি গত বুধবার তার মন্ত্রিসভার রদবদল ঘটান, যুক্ত করেন ৩৬ জন নতুন মন্ত্রী। এই সম্প্রসারণ ও রদবদলের পর মন্ত্রিপরিষদের বহর বেড়ে হয়েছে ৭৮।
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ রয়েছে। ৩৫ বছরের সর্বকনিষ্ঠ এই মন্ত্রীকে মোদি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। জন বার্লা, নিশীথ প্রামাণিক, পঙ্কজ চৌধুরী ও ভি মুরলিধরনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হলফনামা দাখিল করেন, এডিআরের এই প্রতিবেদন তার ভিত্তিতেই তৈরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যে মন্ত্রিসভা গড়েন, তার তুলনায় এবার মামলা থাকা মন্ত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে। সেবার ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ছিল ৩৯ শতাংশের বিরুদ্ধে, এবার ৪২ শতাংশ। কোটিপতি মন্ত্রীর সংখ্যা দুই বছর আগে ছিল ৯১ শতাংশ, এবার ৯০।
এই মন্ত্রিসভার ৭৮ জন সদস্যের মধ্যে ৭০ জনই কোটিপতি। এই কোটিপতিদের মধ্যে ৪ জনের সম্পদ ৫০ কোটির বেশি। মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ধনী কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের সাবেক রাজপরিবারের এই সদস্যকে মোদি বেসামরিক পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। তার সম্পত্তির মোট পরিমাণ ৩৭৯ কোটি রুপি। তার পরেই স্থান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের। মুম্বাইয়ের এই রাজনীতিকের মোট সম্পত্তি ৯৫ কোটি রুপির।
রিপোর্ট অনুযায়ী ২১ জন মন্ত্রী স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, ৯ জন পিএইচডি বা ডক্টরেট এবং ১৭ জন গ্র্যাজুয়েট। ১০ জন দশম শ্রেণি পাস এবং ২ জনের পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যাদের সম্পত্তি তুলনামূলকভাবে কম তাদের মধ্যে রয়েছেন ত্রিপুরার প্রতিমা ভৌমিক (৬ লাখ), পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা (১৪ লাখ)।
মন্ত্রিসভা গঠনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি শিক্ষিত ও নবীনদের সুযোগ করে দিয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী ২১ জন মন্ত্রী স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, ৯ জন পিএইচডি বা ডক্টরেট এবং ১৭ জন গ্র্যাজুয়েট। ১০ জন দশম শ্রেণি পাস এবং ২ জনের পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় রদবদলের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির একঝাঁক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধণ, বাবুল সুপ্রিয় ও প্রতিমন্ত্রী অশ্বিন চৌবেসহ ১৩ জন পদত্যাগ করেন। এনডিটিভিসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৪৫
আপনার মতামত জানানঃ